E-Paper

রদবদলে আখেরে ক্ষতিই, ক্ষোভ নন্দীগ্রামের তৃণমূলে

তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে সৌমেন মহাত্রকে। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পীযূষ ভুঁইয়াকেও।

সৌমেন মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৩
An image of TMC Flag

—প্রতীকী চিত্র।

লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে। বাদ পড়েনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুর, বিশেষ করে তাঁর বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রামও। তবে জমি আন্দোলনের জমিতে সেই রদবদলে দলের সংগঠন আদৌ মজবুত হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ঘনিয়েছে তৃণমূলের ঘরেই।

তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে সৌমেন মহাত্রকে। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পীযূষ ভুঁইয়াকেও। নন্দীগ্রাম এই সাংগঠনিক জেলারই অধীন। আর নন্দীগ্রামেরই নেতা। নতুন যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিয়ে সংশয় রয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে। তাঁদের মতে, দলকে শক্তিশালী করার বদলে দুর্বল করা হচ্ছে। এতে লাভবান হবে বিজেপি-ই।

নন্দীগ্রামের এক তৃণমূল নেতার মতে, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাপতি, ভূমি আন্দোলনের নেতা শেখ সুফিয়ানকে এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট না দিয়ে আগেই ধাক্কাটা দেওয়া হয়েছিল। এ বার সুফিয়ানকে নব গঠিত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি করা হয়েছে বটে, তবে তা কার্যত একটি গুরুত্বহীন পদ। অন্য দিকে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি করা হয়েছে সুহাসিনী করকে। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে আবার প্রশ্ন রয়েছে। সব মিলিয়ে নন্দীগ্রামকে কার্যত শুভেন্দু অধিকারীর হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে ক্ষোভ নন্দীগ্রামের তৃণমূলের নেতাদের একাংশের।

নন্দীগ্রামে তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও রয়েছে। তুলনায় বিজেপি এখানে বেশ গোছানো। এ বার দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোর জনসংযোগে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। গত বিধানসভার নির্বাচনের তুলনায় নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত ভোটে (জেলা পরিষদের নিরিখে) তৃণমূলের ভোটের হার কিছুটা বাড়লেও ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টি ও ২টি পঞ্চায়েত সমিতিই কিন্তু দখল
করেছে বিজেপি।

এমনকী, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটবাক্সেও থাবা বসিয়েছে গেরুয়া শিবির। সম্প্রতি হরিপুর এলাকার শতাধিক তৃণমূল সমর্থক নাম লিখিয়েছেন বিজেপিতে। ফলে নন্দীগ্রামে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের। এই পরিস্থিতিতে পীযূষ ও সুফিয়ানের দ্বন্দ্ব সামলাতে দলের মূল সংগঠন থেকে পীযূষকে সরিয়ে সুফিয়ানকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে আখেরে তৃণমূলের সংগঠনের হাল ফিরবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও।

সুফিয়ান বলছেন, ‘‘দল এতদিন নন্দীগ্রামের কথা ভাবেনি। এখন ভাবছে, আর ভাবছে বলেই পীযূষ ভূঁইয়াকে বাদ দিয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বেশ কিছু ব্লক সভাপতি পরিবর্তন করার আর্জি জানিয়েছি। যাঁদের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে, সেই নেতারা নন্দীগ্রামের কথা ভাবেননি। সেই জন্য দল কোনও পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে পারেনি। ১৭টির মধ্যে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতও বিজেপি পেয়েছে।’’

পরিসংখ্যান দিচ্ছেন পদহারানো পীযূষও। তিনি মনে করাচ্ছেন, যে বিধানসভা নির্বাচনে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত হয়েছিলেন, তার তুলনায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল নন্দীগ্রামে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে আছে। পীযূষের কথায়, ‘‘এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে তৃণমূল কতটা ভাল ফল করেছে। তবে সাংগঠনিক পদ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Nandigram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy