সৈকত শহরে গিয়ে সমুদ্র স্নান— চেনা দৃশ্য দিঘায়। কিন্তু সমুদ্র স্নানে গিয়েই ঘাটে পিছলে পড়ে হামেশাই আহত হচ্ছেন বহু পর্যটক। সৌজন্য শ্যাওলা।
ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত অনেকগুলি স্নানঘাট রয়েছে। পর্যটকেরা সেই সব ঘাটে নেমেই সমুদ্র স্নানের মজা নেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওল্ড দিঘার ১ নম্বর ঘাট, সি হক, ব্লু-ভিউ এবং হাসপাতাল ঘাট জুড়ে ঘন সবুজ শ্যাওলায় ভরে গিয়েছে। শ্যাওলা জমতে জমতে উপরের অংশ বেশ পিছল হয়েছে। স্থানীয় দোকানদাররা জানাচ্ছেন, ঘাটগুলি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়নি। এর জন্য জমে গিয়েছে শ্যাওলা। এতে পিছলে পড়ে আহত হচ্ছেন পর্যটকেরা। সমুদ্রে নেমে স্নান করার সময় ফসকে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না। আসানসোল থেকে বেড়াতে আসা ইন্দ্রজিৎ অধিকারী নামে এক পর্যটক বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলে একদল যুবক-যুবতী নিজস্বী তুলছিলেন। ঘন শ্যাওলাতে আচমকা পা ফসকে একটি মেয়ে পড়ে যায়।’’ হুগলির আরামবাগ থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছিলেন দীপক ঠাকুর। তিনি বলছেন, ‘‘স্নান ঘাটগুলির যে অংশ সমুদ্রের দিকে রয়েছে, তার অবস্থা মারাত্মক। যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসনের উচিত সমস্ত স্নানঘাট অবিলম্বে সংস্কার করা।’’
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে ওল্ড দিঘার সি হক থেকে জগন্নাথ ঘাট পর্যন্ত প্রায় আধ কিলোমিটার এলাকা স্নানের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। পুলিশ এবং পর্ষদ যৌথভাবে সেখানে বোর্ড লাগিয়ে পর্যটকদের স্নানে নামতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু ‘ইয়াসে’র সময় জলোচ্ছ্বাসে সেই সব বোর্ড ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। তারপর ওই সব ঘাটগুলিতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই রয়েছে। আর ঘাটের শ্যাওলা পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করেছে।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বর্ষাকালে যেহেতু নিয়মিত জলোচ্ছ্বাস হয়, তাই ঘাটগুলি অধিকাংশ সময় দেখা যায় না। তবে, শীতকালে মূলত অক্টোবর মাস থেকে বঙ্গোপসাগর অনেকটাই শান্ত হয়ে যায়। সৈকত থেকে কিছুটা দূরে আছড়ে পড়ে রাশি রাশি ঢেউ। আর ভাটার সময় সমুদ্র আরও খানিকটা পিছিয়ে যায়। সেই সময় শ্যাওলা পরিষ্কার করা যেতে পারে বলে মত স্থানীয়দের। এ প্রসঙ্গে পর্ষদের এগজিকিউটিভ অফিসার তথা কাঁথির মহকুমা শাসক শৌভিক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। ঘাটগুলির এই পরিস্থিতির কথা জানা ছিল না। দ্রুত পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য সচেষ্ট হব।’’ সরস্বতী পুজো মিটে যাওয়ার পর আগামী সপ্তাহেই দিঘা থানা এবং দিঘা মোহনা থানার পুলিশ কর্তা এবং নুলিয়াদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। সেখানে পর্যটকদের সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)