খোলা-আকাশের-নীচে: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র
তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১০ ডিগ্রির নীচে। হাড় কাঁপুনি ঠান্ডাতেই খোলা আকাশের নীচে মঞ্চ বেঁধে চলছে অনুষ্ঠান। ফলে অনেক জায়গায় কষ্ট করে অনুষ্ঠান আয়োজন করার পরেও শীতের জন্য দর্শকাসন ভরছে না। হতাশ হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তবে খড়্গপুর শহরে কোনও প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় বাধ্য হয়ে ঠান্ডাতেই উদ্যোক্তারা খোলা জায়গায় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শহরের এক উদ্যোক্তা আক্ষেপ করে বলছিলেন, খড়্গপুরের রেল এলাকায় দুর্গামন্দিরের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও সেখানে প্রেক্ষাগৃহের আমেজ পাওয়া যায় না। আদুনিক প্রেক্ষাগৃহে আরামদায়ক চেয়ার, শব্দরোধী বিশেষ পরিবেশে অনেকে একসঙ্গে বসে অনুষ্ঠান দেখার আনন্দই আলাদা। সেটা পরিবেশ খোলা আকাশের নীচে মঞ্চ বেঁধে কখনওই তৈরি করা সম্ভব নয়।
প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান আয়োজনের ইচ্ছা থাকলেও উপায় কই। গিরি ময়দান স্টেশন সংলগ্ন একসময় গড়ে উঠেছিল টাউন হল। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই হলের হাল খারাপ। টাউন হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন এখন কার্যত অসম্ভব বলে অভিযোগ। এক সময়ে এই টাউন হলে প্রেক্ষাগৃহ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এখন টাউন হল প্রাঙ্গণে প্রতি বছর বইমেলা হয়।
এ বছরও টাউন হল প্রাঙ্গণেই বইমেলা আয়োজন হয়েছে। বইমেলা উপলক্ষে আয়োজিত হচ্ছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। তবে খোলা আকাশের নীচে অনুষ্ঠান হওয়ায় রাত ৮টার পরেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ দর্শকাসন। শুধু বইমেলার অনুষ্ঠান নয়, প্রায়ই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শহরের ‘খড়্গপুর শঙ্খমালা’, ‘স্বর-আবৃত্তি খড়্গপুর’, ‘স্বরসঞ্চারী’, ‘অনুরণন’, ‘ঝিন্ঝোতি’-র মতো সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলি। এ ছাড়া রয়েছে ‘আলকাপ’ নাট্যসংস্থাও। তবে শহরে প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে সকলেই কম-বেশি একই সমস্যায় পড়েন।
গত ২৩ ডিসেম্বর খড়্গপুর দুর্গামন্দিরে বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘খড়্গপুর শঙ্খমালা’। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বাচিক শিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীত শিল্পী শমীক পাল। সেই অনুষ্ঠান নিয়ে সংস্থার সম্পাদক কৃশানু আচার্যের অভিজ্ঞতা, “শীতের সন্ধ্যায় প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠানে দেখার যে আনন্দ তা আমরা দর্শকদের দিতে পারি না। তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করি। যদিও আলো, মাইক সবকিছু আলাদাভাবে জোগাড় করার ঝক্কি যেমন বেশি, তেমনই খরচও বেশি। প্রেক্ষাগৃহ থাকলে এ সব ঝক্কি কমে। এ নিয়ে পুরসভাকে বহুবার বলেও সুফল মেলেনি।”
প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় শীতের আগেই সংস্থার অনুষ্ঠান সেরেছে ‘স্বর-আবৃত্তি খড়্গপুর’। সংস্থার অধ্যক্ষ লীনা গোপ বলছেন, “শহরের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বাঁচিয়ে রাখতে একটা প্রেক্ষাগৃহ তৈরি খুব প্রয়োজন। পুরসভারই প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করা উচিত। কিন্তু তাও হচ্ছে না। শীতের দিনেই তো প্রতিদিনই নানা অনুষ্ঠান।’’ তাঁর কথায়, ‘‘খোলা আকাশের নিচে অনুষ্ঠান আয়োজন করলে রাত বাড়তেই দর্শকাসন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে শহরের সংস্কৃতি ধাক্কা খাবে।”
শহরে প্রেক্ষাগৃহ তৈরি নিয়ে কী ভাবছে পুরসভা? পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমিও মনে করি প্রেক্ষাগৃহ তৈরি প্রয়োজন। টাউনহলের জমিতে শুধু প্রেক্ষাগৃহ নয়, আমরা সিটি সেন্টারও তৈরি করতে চাইছি।’’ পিপিপি মডেলে মাল্টিপ্লেক্স গড়ে সেখানেই একটি প্রেক্ষাগৃহ গড়ার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy