প্রতীকী ছবি।
বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নামে ভূমিহীন ভিক্ষাজীবী এক বৃদ্ধার আবাস যোজনার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে ওই ঘটনায় বিচার চেয়ে বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছেন বৃদ্ধা।
আমড়াগোহাল গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির আগলিমা খাতুন ভিক্ষা করেই দিনাতিপাত করেন। গ্রামের এক বাসিন্দার পুকুরের পাড়ে ঝুপড়িতে থাকেন আগলিমা। নিজের নামে কোনও জমি নেই। আগলিমার দাবি বছর দুয়েক আগে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা জাহেতুন বিবির স্বামী জাহিরুল ইসলাম তাঁকে সরকারি খাস জায়গায় আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। জাহিরুল বর্তমানে পাঁশকুড়া ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি। সেইমতো আগলিমা বিবির নামে একটি বন্ডও তৈরি হয় বলে দাবি। দু’বছর আগে আগলিমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ঢোকে। আগলিমার দাবি, টাকা ঢোকার পর জাহিরুল বাড়ি তৈরির ইট, বালি কেনার জন্য তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়। এর কিছুদিন পর জাহিরুল তার লোকজনদের আগলিমার বাড়ি পাঠিয়ে তাঁর আধার কার্ডের জেরক্স কপির পাশাপাশি ব্যাঙ্কের উইথড্রল স্লিপে টিপ সই করিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। আগলিমার দাবি, পরে ব্যাঙ্কে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। দু’বছর ধরে আগলিমা বাড়ি তৈরি না করায় সম্প্রতি পাঁশকুড়া বিডিও অফিসের কর্তারা এলাকায় তদন্তে যান। প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও কেন তিনি বাড়ি তৈরি করেননি তা আগলিমার কাছে জানতে চাওয়া হয়।
এর পরই বিষয়টি সামনে আসে। সুরাহা চেয়ে পাঁশকুড়ার বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন আগলিমা। তিনি বলেন, ‘‘আমার কেউ নেই। সরকারি খাস জায়গায় বাড়ি করে দেওয়ার জন্য জাহিরুল ইসলাম আমার কাছ থেকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা ও পরে লোক পাঠিয়ে আমার টিপ সই নিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে আরও ১০ হাজার টাকা তুলে নেয়। কিন্তু বাড়ি আর বানিয়ে দেয়নি। এখন বিডিও অফিস থেকে চাপ দিচ্ছে বাড়ি তৈরির জন্য। জাহিরুলকে ফোন করেছিলাম। উনি ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে চেয়েছেন। কিন্তু বাকি ১০ হাজার টাকার ব্যাপারে কিছু বলছেন না।’’
এ ব্যাপারে জাহিরুল ইসলামের বক্তব্য, ‘‘ওই বৃদ্ধার পৈতৃক জায়গার ওপর বন্ড তৈরি হয়েছিল। আমি খাস জায়গায় বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলিনি। উনি আমাকে কোনও টাকাও দেননি। বাড়ি বানাতে পারবেন না বলে শেখ আসলাম নামে একজনকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন বিডিও অফিসে ফেরত দেওয়ার জন্য। আর যে ১০ হাজার টাকার অভিযোগ উনি এনেছেন ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখলেই বোঝা যাবে টাকা কে তুলেছেন।’’
প্রসঙ্গত, বার বারই সরকারি নানা প্রকল্পে দুর্নীতিতে নাম জড়াচ্ছে বিভিন্ন তৃণমূল নেতার। গত জুন মাসে প্রতাপপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পাশের পঞ্চায়েতের এক মহিলার কৃষক বন্ধু প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ বার আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে শাসক দলকে বিঁধেছে বিরোধী বিজেপি। বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘তৃণমূল কাটমানি ছাড়া কিছু বোঝে না। সাধারণ মানুষকে তো এরা প্রতারিত করেই। এখন ভিক্ষুককেও ছাড়ছে না। গোটা দলটাই দুর্নীতির চূড়ায় বসে রয়েছে।’’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানা বলেন, ‘‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy