Advertisement
০৪ মে ২০২৪

খাসজমিতে বাড়ি, টাকা চেয়ে বিতর্কে তৃণমূল নেতা

পূর্বপুরুষের দখলে থাকা খাস জমিতে বাড়ি বানিয়েছিলেন পেশায় রংমিস্ত্রি শেখ আক্তার। তাঁর অভিযোগ, খাসজমিতে বাড়ি করার জন্য দু’লক্ষ টাকা দাবি করেছেন শাসকদলের স্থানীয় দুই নেতা। আক্তারের দাবি, ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার সিংহ এবং মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান নন্দলাল মাহাতো তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন। পেশায় দিনমজুর আক্তার ওই টাকা দিতে না পারায় তাঁকে মানিকপাড়া পঞ্চায়েত অফিস থেকে উচ্ছেদের নোটিস ধরানো হয়েছে। ঘটনাটি জানিয়ে ঝাড়গ্রাম মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

খাস জমিতে শেখ আক্তারের বাড়ি। নির্মীয়মান চালাঘর। (ইনসেটে)  নিজস্ব চিত্র।

খাস জমিতে শেখ আক্তারের বাড়ি। নির্মীয়মান চালাঘর। (ইনসেটে) নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৭
Share: Save:

পূর্বপুরুষের দখলে থাকা খাস জমিতে বাড়ি বানিয়েছিলেন পেশায় রংমিস্ত্রি শেখ আক্তার। তাঁর অভিযোগ, খাসজমিতে বাড়ি করার জন্য দু’লক্ষ টাকা দাবি করেছেন শাসকদলের স্থানীয় দুই নেতা। আক্তারের দাবি, ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার সিংহ এবং মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান নন্দলাল মাহাতো তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন। পেশায় দিনমজুর আক্তার ওই টাকা দিতে না পারায় তাঁকে মানিকপাড়া পঞ্চায়েত অফিস থেকে উচ্ছেদের নোটিস ধরানো হয়েছে। ঘটনাটি জানিয়ে ঝাড়গ্রাম মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

মানিকপাড়ার কৃষ্ণবাঁধ মৌজায় ইঁটের গাঁথনির বাড়ি তৈরি করে সস্ত্রীক বসবাস করেন বছর সাতাশের আক্তার। এলাকার আরও অনেকে খাস জমি দখল করে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। আক্তারের দাবি, তিনি স্থানীয় দুই নেতার মৌখিক অনুমতি নিয়ে বছর চারেক আগে বাড়ি তৈরি করেন। সম্প্রতি বাড়ি লাগোয়া গোয়ালের অস্থায়ী চালাঘর তৈরির কাজ শুরু করতেই সমস্যা দেখা দেয়।

অভিযোগ, খাসজমিতে বাড়ি করার জন্য গত ৪ অগস্ট উপ প্রধান নন্দলাল মাহাতো ও তৃণমূলের মানিকপাড়া অঞ্চল সভাপতি সুকুমার সিংহ ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন। কিন্তু দিনমজুর আক্তারের পক্ষে এককালীন এত টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ৫ অগস্ট উপপ্রধান নন্দবাবু খাস জমিতে অবৈধ নির্মাণ বন্ধের জন্য
নোটিস পাঠান।

আক্তার প্রধানের কাছে লিখিতভাবে জানতে চান, একই জমিতে অন্যরা বাড়ি তৈরি করছে। ওই জমি কেনাবেচাও চলছে। তাহলে কেন শুধু তাঁকে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে নোটিস পাঠানো হয়েছে। প্রশ্নের জবাব দেননি প্রধান চন্দনা মাহাতো।

গত ১২ অগস্ট কাছে নোটিস পাঠিয়ে ওই জমির কাগজপত্র তলব করেন তিনি। আক্তারের বক্তব্য, ‘‘খাস জমির পাট্টা পাওয়ার জন্য ভূমি দফতরে আবেদন করেছি। জমির কোনও কাগজপত্র নেই। হয়রানির জন্যই এমন করা হচ্ছে।’’ তিনি ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি চূড়ামণি মাহাতোর কাছেও অভিযোগ জানান। কোনও লাভ হয়নি। হুমকির মাত্রা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ। ৩১ অগস্ট ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসকের কাছেত অভিযোগ করেন আকতার। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। একাংশ গ্রামবাসী বলছেন, খাস জমির হস্তান্তর চলছে। শাসক দলের একাংশ দালালির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ।

মানিকপাড়ার উপ প্রধান নন্দলাল মাহাতোর দাবি, “সরকারি জায়গায় অবৈধ নির্মাণ করার জন্য ওই ব্যক্তির কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে। সেই কারণেই তিনি আমার বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করছেন।” তবে নন্দবাবু মানছেন, “এলাকায় সরকারি জমি দালালচক্রের জন্য বেহাত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি।” মানিকপাড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার সিংহ বলেন, “ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমার কথাই হয়নি। বেআইনি-কাজ আড়াল করার জন্য উনি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। ” ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখব কী হয়েছে।”

ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। ভূমি দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট পেলে পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC money extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE