Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

অভিযুক্ত ধরা পড়ল গাঁজার টানে

কিশোরীর দেহ উদ্ধারের পরে অভিযোগ উঠেছিল, ধর্ষণ এবং খুনের। শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের চিয়াড়া গ্রামের সেই ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতারের পরে পুলিশও জানাল, ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত যুবক স্বীকার করেছে, ওই কিশোরী তাকে আম পাড়তে বাধা দেওয়ায় ‘আক্রোশে’ই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।

ধৃত হামিদুল। নিজস্ব চিত্র

ধৃত হামিদুল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

কিশোরীর দেহ উদ্ধারের পরে অভিযোগ উঠেছিল, ধর্ষণ এবং খুনের। শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের চিয়াড়া গ্রামের সেই ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতারের পরে পুলিশও জানাল, ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত যুবক স্বীকার করেছে, ওই কিশোরী তাকে আম পাড়তে বাধা দেওয়ায় ‘আক্রোশে’ই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।

Advertisement

মঙ্গলবার হামিদুল আলি নামে ওই যুবককে হাওড়ার কুলগাছিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে তমলুক থানার পুলিশ। তার আগে তাকে ধরতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে পুলিশকে। পাততে হয়েছে ফাঁদ। শেষমেশ টানা ১৮ ঘণ্টার অপেক্ষার পরে পুলিশে জালে ধরা পড়ে হামিদুল।

গত ২ জুন চিয়াড়া গ্রামে এক কিশোরীর দেহ মিলেছিল। ঘটনার একদিন পর থেকেই নিখোঁজ হয়েছিল ওই কিশোরীর পড়শি হামিদুল। সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকা হামিদুলকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। তদন্তকারীদের কাছে খবর ছিল, ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে থাকত না হামিদুল। যেখানে সেখানে রাত কাটত। তবে সে নিয়মিত গাঁজার নেশা করত। তার মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশন থেকে জানা যায়, সে কুলগাছিয়া এলাকায় রয়েছে। সেখানে স্টেশনের কাছে একটি দোকানে গাঁজা খেতে যেত হামিদুল। পুলিশের কাছে খবর ছিল, রবি এবং সোমবার ওই দোকানে গিয়েছিল সে। এর পরেই দোকানের কাছেই ঘাঁটি গেড়েছিল পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, হামিদুল সোমবার সন্ধ্যা থেকে দু’দিনের পুরানো ঠেকে একবারও যায়নি। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ সে হাঁটতে হাঁটতে দোকানে যাচ্ছিল। তখনই তাকে পাকড়াও করা হয়। ওই অভিযানে তমলুকের সিআই বিশ্বজিৎ হালদার, এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল ছিলেন। তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিযুক্তের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তার হদিস মেলে। তারপর আগে থেকে আমরা পৌঁছেছিলাম কুলগাছিয়া স্টেশনে।’’

Advertisement

হামুদিলকে গ্রেফতার করে প্রথমে কোলাঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। তাতেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের দাবি, জেরায় হামিদুল জানিয়েছে, গত ৩০ মে দুপুরে সে ওই কিশোরীর বাড়ির আম গাছে উঠেছিল। তা দেখতে পেয়ে তাকে বকেছিল কিশোরী। ‘ক্ষুব্ধ’ হামিদুল গাছ থেকে নেমে তাকে চড় মারে এবং বাড়ির পিছনে একটি নর্দমার কাছে কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এর পরে কিশোরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এতেও ক্ষান্ত হয়নি হামিদুল। মৃত কিশোরীকে সে ফের ধর্ষণ করে খড় চাপা দিয়ে চলে যায়।

কোলাঘাট থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই কিশোরীর মা-বাবা যখন মেয়ের খোঁজ করছিলেন, হামিদুল এলাকাতেই ছিল। কিশোরীর বাবার সঙ্গে কথাও হয়েছিল। হত্যার পরের রাতে হামিদুল মৃতদেহ কিছুটা দূরে খড়িবনের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার ভি সলমোন নেসাকুমার বলেন, ‘‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ধৃত সব অভিযোগ স্বীকার করেছে।’’ তবে হামিদুলের ওই কাজে অবাক তার মা। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সেদিন তো কিছুই বুঝতে পারিনি। একদম স্বাভাবিক আচরণ ছিল ওর।’’

আজ বুধবার হামিদুলকে তমলুক জেলা দায়রা আদালতে তলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার ফাঁসি দাবি করেছে মৃত কিশোরীর পরিবার। হামিদুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ দিন তমলুকের মানিকতলায় পথ অবরোধ করেন এসইউসি কর্মীরা। পরে জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.