Advertisement
E-Paper

একই সময়ে দুই সম্মেলন, ভাগাভাগি আদিবাসী সংগঠনে

আদিবাসী সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর অন্দরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে মেদিনীপুরে একই সময়ে দুই সম্মেলনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪২
শালবনি হাইস্কুলে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পঞ্চম রাজ্য সম্মেলন।—ছবি সংগৃহীত।

শালবনি হাইস্কুলে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পঞ্চম রাজ্য সম্মেলন।—ছবি সংগৃহীত।

সম্মেলনের ভাগাভাগিতে স্পষ্ট আদিবাসী সংগঠনের বিভাজন।

আদিবাসী সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর অন্দরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে মেদিনীপুরে একই সময়ে দুই সম্মেলনে। মেদিনীপুরের সম্মেলনে প্রস্তাব উঠল নতুন রাজ্য কমিটি গঠনের। আর শালবনির সম্মেলনে আওয়াজ উঠল, চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে চিরাচরিত প্রথায় জল-জমি-জঙ্গলের অধিকারের লড়াই জারি রাখতে হবে। লক্ষ্যণীয়ভাবে সংগঠনের সর্বভারতীয় সুপ্রিমো ‘দিশম পারগানা’ নিত্যানন্দ হেমব্রম ছিলেন মেদিনীপুর শহর লাগোয়া মহেন্দ্রডিহির জেলা সম্মেলনে। শীর্ষ পদাধিকারী হয়েও শালবনিতে সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা চলছে।

শনি ও রবিবার শালবনি হাইস্কুলে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পঞ্চম রাজ্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই দু’দিনই মেদিনীপুর শহর লাগোয়া মহেন্দ্রডিহিতে সংগঠনের অবিভক্ত তিন জেলার (ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর) সম্মেলনের আয়োজন ছিল। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই এই সংগঠনে বিভাজন দেখা দেয়। ফাটল বড় হয় সংগঠনের ‘জেলা পারগানা’ রবিন টুডুর স্ত্রী বিরবাহা সরেনকে লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী করায়। জেলা পারগানার স্ত্রী ‘পারগানা আয়ো’কে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মানতে পারেননি সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। তাঁরাই জেলা পারগানা পদ থেকে রবিনকে সরিয়ে দেন গত অগস্টে। তা আবার মানতে পারেননি সংগঠনের সুপ্রিমো ‘দিশম পারগানা’ নিত্যানন্দ। তিনি রবিন টুডুর পাশেই দাঁড়ান। এ বার সংগঠনের রাজ্য ও জেলা সম্মেলন একই জেলায় একই সময়ে দুটি পৃথক স্থানে হওয়ায় সংগঠনের ভাঙন প্রকাশ্যে এল।

সংগঠনের রাজ্য নেতা ‘পণত পারগানা’ বাদলচন্দ্র কিস্কু বলেন, ‘‘শালবনিতে রাজ্য সম্মেলনে সব জেলা থেকে প্রায় আড়াই হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন। দিশম পারগানা নিত্যানন্দ হেমব্রমকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি আসেননি।’’ শালবনির সম্মেলন উদ্বোধন করেন ‘দিশম পারানিক’ রামচন্দ্র মুর্মু। বাদলের দাবি, সম্মেলনে রাজ্য নেতৃত্ব-সহ সব জেলা পারগানা, সিদো-কানহো ও পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর বংশধরেরা উপস্থিত ছিলেন। নিত্যানন্দ হেমব্রম এলেন না কেন? বাদলের জবাব, ‘‘ওঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উনি অসুস্থতার জন্য আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন।’’

নিত্যানন্দ অবশ্য মেদিনীপুরে জেলা সম্মেলনে দু'দিন ধরেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মাঝিদের একটা চিরাচরিত সিস্টেম আছে। সেই সিস্টেম ওরা মানছে না, লোকজন ভাগ হয়ে যাচ্ছে। তাই শালবনির সম্মেলনে যাইনি।’’ যাঁকে নিয়ে বিরোধ সেই রবিন-জায়া বিরবাহা সরেনও শনিবার এই সম্মেলনে ছিলেন। মেদিনীপুরের সম্মেলনের উদ্যোক্তা রবিন টুডু আগেই বলেছিলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে তিনিই এখন জেলা পারগানা। এ দিন তিনি দাবি করেন, ‘‘সম্মেলনের শুরুতে ৮৯৭ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। পরে আরও অনেকেই আসেন। সম্মেলনে প্রতিনিধিরা রাজ্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব তুলেছেন।’’

এই রাজ্য কমিটি কি সমান্তরাল আরেকটি কমিটি হবে? রবিনের জবাব, ‘‘এ সব নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ওরা ওদের মতো করছে, আমরা আমাদের মতো।’’ শালবনির সম্মেলন স্থল থেকে ফোনে বাদলের সংযোজন, ‘‘ঠিক হয়েছে ৯ নভেম্বর সব জেলার জেলা পারগানাদের নিয়ে বৈঠকে বসে নতুন কমিটি হবে।’’

ভাগাভাগি প্রায় স্পষ্ট। সুপ্রিমো নিত্যানন্দও বলছেন, ‘‘যাঁরা সঠিক পথে চলবে তাঁদেরই উৎসাহ দেব।’’

Bharat Jakat Majhi Pargana Mahal Conference
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy