Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Garbeta

‘দুয়ারে চা’য়ে চুমুক মমতা, শুভেন্দুরও

শুভেন্দুর বাড়ি গড়বেতার সর্বমঙ্গলা মন্দির পাড়ায়। বাড়ি বলতে টালির ছাউনি দেওয়া ১০ ফুট বাই ১২ ফুটের এক টুকরো কুঠরি।

‘দুয়ারে চা’ নিয়ে গড়বেতার শুভেন্দু দে। নিজস্ব চিত্র

‘দুয়ারে চা’ নিয়ে গড়বেতার শুভেন্দু দে। নিজস্ব চিত্র

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
গড়বেতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ১০:৩২
Share: Save:

তাঁর বানানো চায়ের চুমুকে যেন মুছে যায় রাজনীতির দলাদলিও।

তাঁর হাতের তৈরি চা খেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। চা শেষ করে তাঁর পিঠ চাপড়ে তারকা সাংসদ দেব বলেছিলেন, ‘‘বাহ্‌, ভাল চা খেলাম!’’ ওই চায়ে চুমুক দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।

তিনি নিজেও আরেক শুভেন্দু। পুরো নাম শুভেন্দু দে। রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির ‘অনুপ্রেরণা’তেই পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার এই যুবক শুরু করেছেন ‘দুয়ারে চা’। মোবাইলে ফোন করলেই মুহূর্তে বাইক হাঁকিয়ে পৌঁছে যান এই চাওয়ালা। লাল চা, দুধ চা, চিনি ছাড়া কিংবা চিনি দেওয়া—যার যেমন পছন্দ, তেমনটা বানিয়ে কাগজের কাপে হাতে তুলে দেন। স্নাতকস্তর অবধি পড়াশোনা করা শুভেন্দু ওরফে পাপাই বলছেন, ‘‘দুয়ারে চা বেচেই সংসার চলে।’’

শুভেন্দুর বাড়ি গড়বেতার সর্বমঙ্গলা মন্দির পাড়ায়। বাড়ি বলতে টালির ছাউনি দেওয়া ১০ ফুট বাই ১২ ফুটের এক টুকরো কুঠরি। সেখানেই বয়স্ক বাবা-মা, স্ত্রী এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। ২০০৭ সালে গড়বেতা কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন শুভেন্দু। এরপর সরকারি চাকরি না পেয়ে একটি মোবাইল কোম্পানিতে সেল্‌সম্যানের কাজ জোগাড় করেন তিনি। তবে সেই কাজ করতে গিয়েই ২০১০ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হয়েছিল ডেঙ্গিও। তাঁর চিকিৎসায় কার্যত সর্বস্বান্ত হয়েছিল পরিবার। এরপর ২০১১ সালে জামাইবাবুর কাছ থেকে টাকা ধার করে গড়বেতা থানার সামনে খুলেছিলেন শুভেন্দু। প্রথমে চা, তারপর ধীরে ধীরে চপ, ঘুগনি, টোস্ট, মুড়ি, বিস্কুট— বাড়তে থাকে বিক্রি। হাল ফেরে সংসারেও।

গড়বেতা থানার সামনের রাস্তায় ফোন করে ডাকা একজন খদ্দেরের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে শুভেন্দু বললেন, ‘‘সৎ পথে রোজগার করছি।’’ চা দোকান না হয় ঠিক আছে। কিন্তু ‘দুয়ারে চা’য়ের ভাবনা এল কী ভাবে? শুভেন্দু জানালেন, ২০২০ সালে মার্চ মাসে লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর চা দোকান। তখন পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়েই বাড়ি বাড়ি চা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন শুভেন্দু। প্রথমে কেটলি হাতে পায়ে হেঁটে, তারপর বাইকে শুরু হয় শুভেন্দুর ‘দুয়ারে চা’। এ ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা কি মুখ্যমন্ত্রী? শুভেন্দুর জবাব, ‘‘দিদির দুয়ারে সরকার কর্মসূচি খুব জনপ্রিয়। তাই আমিও বাইকে ‘দুয়ারে চা’ লিখে ফেরি করতে থাকি। বিক্রিও বাড়তে থাকে।’’

ভোর সাড়ে চারটে থেকে শুরু। দুপুরে ঘণ্টা দু’য়েক বিশ্রাম। তারপর বিকেল সাড়ে চারটে থেকে রাত ১১টা— গড়বেতা পঞ্চায়েত এলাকার যে কোনও প্রান্ত থেকে ফোন করলেই শুভেন্দু পৌঁছে যান সেখানে। সরকারি অফিস, সভা বা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি, খেলার মাঠ, আড্ডার ঠেক বা রাত-বিরেতে সৎকারে ব্যস্ত শ্মশান বন্ধু— কাউকে ফেরান না শুভেন্দু। তাঁর হাতের চায়ের ‘ফ্যান’ স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনও। সেই কারণেই গড়বেতায় রাজনৈতিক নেতাদের সভা, বৈঠক হলে ডাক পড়ে তাঁর। শুভেন্দু বলছেন, ‘‘আমার হাতে তৈরি চা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব, মুকুল রায়, মহম্মদ সেলিম, এমনকি শুভেন্দু অধিকারীও খেয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE