Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ের সাজে সাজছে পাঁউশির আশ্রমকন্যারা

বাঙালি ঘরের ‘কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা’। ‘কন্যাদায়’ নিয়ে মাথা ঘামাতে তিনি রাজি নন কোনও দিনই। একের পর এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর সে আয়োজনে কখনও কোনও ফাঁক রাখেননি। এ বার আবার তিন মেয়ের বিয়ে। তাই ফুরসৎ নেই বলরাম করণের।

শান্তনু বেরা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৩
Share: Save:

বাঙালি ঘরের ‘কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা’। ‘কন্যাদায়’ নিয়ে মাথা ঘামাতে তিনি রাজি নন কোনও দিনই। একের পর এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর সে আয়োজনে কখনও কোনও ফাঁক রাখেননি।

এ বার আবার তিন মেয়ের বিয়ে। তাই ফুরসৎ নেই বলরাম করণের। কাঁথির পাঁউশি অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম এ বছর আবার সাজ সাজ রব। ২৩ এপ্রিল বিয়ে সোমা, পম্পা আর প্রতিমার। সেই কোন ছোটবেলায় এই আশ্রমে এসেছিলেন ওঁরা, বাবা বলরামের স্নেহে বড় হয়েছেন। এ বার সংসার ধর্ম পালন করতে সেই বাবাই পাঠাচ্ছেন শ্বশুর বাড়ি। এটাই যে নিয়ম। তার আগে ব্যস্ততার শেষ নেই। বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ় বলরাম করণ খুঁজছে সাহায্যের হাত। মেয়েদের শাড়ি, কানের দুল, সামান্য শয্যাদ্রব, আলমারি— যা যা দেওয়া হয়, সব দিতে চান তিনি।

কিন্তু কেন? যে ভাবে মেয়েদের মানুষ করেছেন বলরাম তাতে তো যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেওয়ার কথা নয়। নিজেদের সম্মান নিয়েই শ্বশুরবাড়ি যেতে পারতেন পম্পা, সোমা, প্রতিমারা।

প্রশ্ন শুনেই বলরাম বলেন, ‘‘যৌতুক নয়, এটা ভালবাসা। মেয়েগুলো আমার। বাঙালি পরিবারে মেয়ের যেমন ভাবে বিয়ে হয় তেমন ভাবেই ওদের বিয়ে দেব। তাই সব আয়োজন থাকবে। ওদের মনে যেন কোনও কষ্ট না থাকে জন্মদাতা বাবা, মা নেই বলে।’’ সে আয়োজনের অর্থ জোগাচ্ছেন কে? বলরামের গলায় ভেসে ওঠে — “আমার ভাণ্ডার আছে ভরে, তোমা সবাকার ঘরে ঘরে/ তোমরা চাহিলে সবে এ পাত্র অক্ষয় হবে।’’ হাত তুলে দেখিয়ে দেন চারদিকের গ্রামটা। বলেন, “এই সব বাড়িতে আমার সম্পদ আছে। আর এখনও অনেক সহৃদয় মানুষ আছেন এই সমাজে।’’ তাঁদের আশীর্বাদ ও স্নেহদানে তিন আশ্রম নন্দিনীর বিয়ের আয়োজন চলছে।

তিন বছর বয়সে পম্পা ও প্রতিমা এসেছিল আশ্রমে। সোমা দেড় বছরে। গ্রামের লোকেরা দিয়ে গিয়েছিল তাঁদের। লেখাপড়া শিখে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছে ওঁরা সকলেই। পম্পা ভাল নাচে, সেইসঙ্গে এ বার সে নার্সিং ট্রেনিংও নিচ্ছে। প্রতিমা ভাল আবৃত্তি করে, সেও নার্সিং ট্রেনিং নিয়েছে। সোমা সেলাই ও বিউটিশিয়ন কোর্স করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছে। পাত্ররাও যথেষ্ট শিক্ষিত। পম্পার হবু স্বামী দেবদুলাল জানা ছবি আঁকেন সেইসঙ্গে তিনি সারপাই গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী। প্রতিমার বিয়ে হচ্ছে হলদিয়ার গোবিন্দ সাঁতরার সঙ্গে। তিনি স্নাতক, বাবা সরকারি কর্মী। আর খড়গপুরের ব্যাবসায়ী দেবব্রত দাসকে বিয়ে করেছেন সোমা।

বিয়ে হলেই যে সব সম্পর্ক চুকে যাবে, তেমন কিন্তু নয়। জানালেন বলরাম করণ। মেয়েরা যেমন বাপের বাড়ি আসে, তেমনই আসবে। জামাইষষ্ঠী, ভাইফোঁটার মতো সব অনুষ্ঠান পালন করবেন তিনি।

আশ্রমের ১০২ জন অনাথ ছেলেমেয়েও এখন খুব ব্যস্ত। বিয়ের জন্য হাতে আর সময় নেই। গ্রামবাসীদের নিমন্ত্রণ, কেনাকাটা, প্যান্ডেল, আলো— কাজ কী কম। গ্রামের বাসিন্দারাই কেউ কিনে দিয়েছেন আলমারি, কেউ শাড়ি। বিয়েতে পাত্র-পাত্রীকে আশীর্বাদ করতে আসার কথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। তাই আয়োজনে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না আশ্রমের ছেলে মেয়েরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE