Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে এল পাখি, তবে ১০০ মিটার দূরে

এত দিন ঘাটালের হরিসিংহপুর পার্কের ঝিলে ঘাঁটি গাড়ত শীতের অতিথিরা। এ বার তার থেকে ১০০ মিটার দূরের ঝিলে ডেরা বেঁধেছে তারা। তবে এতেই খুশি ঘাটালের পক্ষীপ্রেমীরা। এলাকায় জমছে ভিড়ও।

বদল: এই ঝিলেই আসত পরিযায়ী পাখির দল। নিজস্ব চিত্র

বদল: এই ঝিলেই আসত পরিযায়ী পাখির দল। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হল। অবশেষে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দেখা মিলল সেই পরিযায়ী পাখিদের। তবে পুরনো আস্তানা থেকে বেশ কিছুটা দূরে।

এত দিন ঘাটালের হরিসিংহপুর পার্কের ঝিলে ঘাঁটি গাড়ত শীতের অতিথিরা। এ বার তার থেকে ১০০ মিটার দূরের ঝিলে ডেরা বেঁধেছে তারা। তবে এতেই খুশি ঘাটালের পক্ষীপ্রেমীরা। এলাকায় জমছে ভিড়ও।

বন দফতর সূত্রে খবর, ২০১২ সাল থেকে ঘাটালের হরিসিংহপুরের ঝিলে নিয়ম করে আসতে শুরু করেছিল শীতের পরিযায়ীরা। প্রথম বারে নির্বিঘ্নই ছিল তাদের শীত-সফর। পাখিদের আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমতে শুরু করে এলাকায়। এর পরে এলাকার পরিবেশের অবনতি হওয়া সত্ত্বেও গত বছর পর্যন্ত হাজার-হাজার পরিযায়ী পাখির দেখা মিলেছিল নভেম্বরের শেষেই। ব্যতিক্রম হল এ বার। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এ বছর তাদের দেখা না মেলায় উদ্বিগ্ন হয়েছিল বন দফতর। হতাশ হয়েছিলেন ঘাটালবাসীও। তবে শেষমেশ জায়গা বদল করে তারা ফেরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সকলেই।

জানা গিয়েছে, পরপর পরিযায়ীদের আসতে দেখে সাঁতরাগাছি ঝিলের মতোই মতোই হরিসিংহপুর পার্কের ঝিলটিকেও ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত নেয় বন দফতর। প্রধানত নজর রাখা হবে পাখিদের স্বাচ্ছন্দ্যে। শিকারিদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে পদক্ষেপ করা হবে। ঝিলের পাশে পিকনিক করতে আসা লোকেদেরও সংযত করতে মাঠে নামে দফতর। ঝিলে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করা হয়। এই কাজে পাশে দাঁড়ায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। জোরে মাইক বাজানো বন্ধ করা এবং ঝিলের দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন।

যদিও পক্ষীপ্রেমী ও ঘাটালবাসীর সাফ বক্তব্য, বন দফতর ও প্রশাসনের উদ্যোগের অভাবই এ জন্য দায়ী। প্রথম প্রথম কড়া নজরদারি শুরু হলেও শিকারিদের হাত থেকে পরিযায়ীদের রক্ষা করতে পারেনি প্রশাসন। যেমন, গত বছর দেখা গিয়েছিল যে সকাল হতেই ঝিলে উপস্থিত হচ্ছিল এক দল শিকারি। ঝিল সংলগ্ন পার্কে পিকনিক করার পর থার্মোকলের থালাবাটিও গিয়ে পড়ছিল গিয়ে ঝিলেই। রোখা যায়নি মাইক বাজানোও। এমনকী ঝিলে অবাধে চলছিল মাছ ধরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “গত বছর থেকেই শীতের অতিথিদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছিল। সম্ভবত সে কারণেই এত দেরি এবং জায়গা বদল।”

যদিও এ প্রসঙ্গে খড়্গপুরের ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের উদ্যোগের অভাব ছিল না। তবে পুরনো ঝিলের চেয়ে নতুন ঝিলটি হয়তো বেশি আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ বলে মনে হয়েছে পাখিদের। তাই সেখানেই এ বার আশ্রয় নিয়েছে তারা।” ইতিমধ্যেই নতুন ঝিলটির উপর কড়া নজর রেখেছে বন দফতর। পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সে জন্য সচেতনতা শিবিরের আয়োজন এবং ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটালের যে পার্কের ঝিলে যে পাখিগুলি এসেছে, তারা সরাল প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। নাম লেসার হুইসলিং টিল। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এই পাখিদের চেহারা অনেকটা হাঁসের মতো। তবে আকারে অনেক ছোট। গায়ের রঙ বাদামি। গলা ও পেটের কাছে হাল্কা সাদা। ঠোঁট কিন্তু দেশী হাঁসের মতোই। এগুলিই পযর্টকদের প্রধান আকর্ষণ। জলের কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে এরা। প্রধান খাদ্য জলজ উদ্ভিদ, ছোট মাছ, গেঁড়ি-গুগলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migratory Birds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE