নাকের বিচারে বেলদা কলেজ ‘এ প্লাস গ্রেড’ অর্জন করেছে বছর দুয়েক আগে। কিন্তু এখনও স্বশাসিত হওয়ার আবেদন করেনি তারা। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কলেজের অন্দরেই। শুরু হয়েছে আভ্যন্তরীণ টানাপড়েন। এর জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পরিচালন সমিতির সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করছেন অনেকে। অনেকে মনে করছেন, ‘ক্ষমতা’ হারানোর ভয়ে কলেজ প্রশাসনের একাংশ এই বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যদিও সে কথা অস্বীকার করে আরও সময় নেওয়ার কথা বলছে কলেজ প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল অ্যাসেসম্যান্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল (নাক) তিনবার বেলদা কলেজ পরিদর্শন করেছে। ২০০৬ ও ২০১৫ সালে ‘বি গ্রেড’ পেয়েছিল এই কলেজ। ২০২৩ সালে ৩১ এপ্রিল ও ১ জুন দু’দফায় ওই কলেজ পরিদর্শন করে নাক। এ বার মেলে ‘এ প্লাস গ্রেড’। প্রথমের দু’টি পরিদর্শনের সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন মানবেন্দ্র মণ্ডল। ২০২৩ সালের পরিদর্শনের সময়ে অধ্যক্ষ হয়ে আসেন চন্দ্রশেখর হাজরা। তিনিই এখন অধ্যক্ষ। চন্দ্রশেখর বলছেন, ‘‘আমাদের আরও সবদিক থেকে পোক্ত হয়ে নিয়ে আবেদন জানানো হবে।’’
এই বিলম্বেই হতবাক শিক্ষা প্রশাসনের একাংশ। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, ইউজিসির নির্দেশিকা অনুযায়ী কোনও কলেজ ‘এ’ বা ‘এ প্লাস’ পেলেই স্বশাসিত হওয়ার আবেদন করতে পারে। অনুমোদনও পাওয়া যায়। বেলদা কলেজের অধ্যাপক তুহিনকান্তি দাস বলছেন, ‘‘কলেজ নাকের বিচারে যে স্কোর করেছে তাতে অনায়াসেই আমরা অ্যাকাডেমিক অটোনমি (স্বশাসন) পেয়ে যাব। সেই জায়গায় আমরা আছি।’’
দাঁতনের ভট্টর কলেজও একই সময়ে (২০২৩ সালে) নাকের বিচারে ‘এ গ্রেড’ পেয়েছিল। ইতিমধ্যেই স্বশাসিত হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে তারা।
বামপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুটার সদস্য তথা বেলদা কলেজের অধ্যাপক দেবমাল্য খুঁটিয়া বলেন, ‘‘কোনও কলেজ স্বশাসিত হয়ে গেলে সে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তখন সিলেবাস তৈরি, পরীক্ষা নেওয়ার মতো বিষয়গুলো কলেজ নিজেই করতে পারবে। তার জন্য চাই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো।’’ তখন কলেজ পরিচালন কমিটি কি থাকবে? তার মতে, ‘‘পরিচালন কমিটি থাকলেও তার কাঠামো অন্যরকম হবে। মাথায় থাকবেন ইউজিসির কেউ।’’ অনেকে মনে করছেন, পরিচালন সমিতি সংক্রান্ত জটিলতার জন্যই এখনই স্বশাসনের দিতে যেতে চাইছে না কলেজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের এক অধ্যাপকের আক্ষেপ, ‘‘হয়তো এই কারণেই কলেজ এক্ষেত্রে উদাসীন।’’
স্বশাসনের আবেদন কবে জানানো হবে? বেলদা কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট বলছেন, ‘‘কলেজ এখনও কিছু দিক থেকে পিছিয়ে। আবেদন জানানোর আগে সেই ফাঁকগুলো পূরণ করে নিয়ে তারপরে আবেদন জানানো হবে।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘ফের নাকের পরিদর্শন হলে স্কোর আরও বাড়বে। তখন অনায়াসে আবেদন করা যাবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)