পঞ্চায়েত ভোটের চব্বিশ ঘণ্টাও বাকি নেই। তার আগে কোথাও বিরোধী প্রার্থীদের উপর হামলা, কোথাও বাইক বাহিনীর দাপট—সব মিলিয়ে ভোটের আগের দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠল জেলা। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত শাসকদল।
শনিবার বাড়িতে ঢুকে বিজেপির এক জেলাপরিষদ প্রার্থীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ খেজুরি-১ ব্লকের বাহারগঞ্জ গ্রামে এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পম্পা দাস নামে স্থানীয় জেলা পরিষদের ৫১ নম্বর আসনের বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ঘর থেকে বাইরে বের করে নিয়ে মাথায় টাঙ্গি দিয়ে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। স্ত্রীকে বাঁচাতে গেলে স্বামী বিবেকানন্দ দাসকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, পাশের ঘোলাবাড় থেকে তৃণমূল নেতা রতিউর রহমানের নেতৃত্বে একদল যুবক মোটর বাইক নিয়ে এই হামলা চালায়। এমনকী গুরুতর আহত পম্পাদেবী ও তাঁর স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও গাড়িকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরে একটি রিকশায় করে আহকদের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ দু’জনকে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
কাঁথির বিজেপি নেতা নবীন প্রধান বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে শাসক দলের সন্ত্রাস অব্যাহত। ভোটের দিন যাতে বিজেপির কেউ ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে না থাকতে পারে, তার জন্য পরিকল্পনা মাফিক এই হামলা হয়েছে।’’ বিজেপিনেতৃত্বের দাবি, খেজুরি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে, অভিযোগ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা মহকুমা শাসক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
হামলার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে শাসকদল। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই ঘটনা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের। তৃণমূল ওই ঘটনায় জড়িত নয়।’’
খেজুরি-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সত্যরঞ্জন বেরার দাবি, ‘‘আমরা এই কাজ করিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তির প্রতীক। আমরা সেই শান্তির আদর্শ নিয়ে কাজ করি। এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি’’
এদিকে শনিবার রাত থেকে নন্দীগ্রাম-২ ব্লক জুড়ে বাইক বাহিনীর দাপট শুরু হয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছে। বিরুলিয়া, ঘোলপুকুর বাজার, আমদাবাদ, খোদামবাড়ি-সহ একাধিক জায়গায় সারা রাত ধরে শাসক দলের বাইক বাহিনী ঘুরে বেড়িয়েছে বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। রবিবার সকাল থেকে গোটা ব্লক জুড়ে শ’য়ে শ’য়ে বাইক মিছিল ঘুরতে দেখা গিয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক সংগঠন) প্রদীপ দাসের অভিযোগ, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ভোট হচ্ছে না। তাই ওখানকার তৃণমূল নেতারা বাইক বাহিনী নিয়ে ‘অস্ত্র’ দেখিয়ে প্রার্থীদের ভয় দেখাচ্ছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের সন্ত্রাসে আমদাবাদে তাঁদের একজন প্রার্থী ইতিমধ্যে পঞ্চায়ত থেকে সরে দাঁড়াবে বলে জেলা নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, বাইক মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ নন্দীগ্রামে বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। যদিও পরে জেলা নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের নির্দেশ পেয়ে গ্রামে যায় নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ।
তৃণমূলের তরফে সমস্ত ঘটনা ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাথ পাল বলেন, ‘‘কেন এ সব করতে যাব? আসলে পরাজয়ের প্রহর গুনছে বিজেপি।’’