Advertisement
E-Paper

ভোটকর্মীদের ‘আঁধার’ দূরে দৃষ্টিহীনদের মোমবাতি

পূর্ব মেদিনীপুরে নির্বাচনে ভোট কর্মীরা যে মোমবাতি, ডাস্টার, রুমাল ব্যবহার করবেন, তা তৈরির বরাত পেয়েছিল চৈতন্যপুরের বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০০:৪৬
ব্যস্ত: মোমবাতি বানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

ব্যস্ত: মোমবাতি বানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্তও ছিল ধোঁয়াশা। তাতে প্রভাবিত হয়েছিল ভোট প্রচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৈনন্দিন জীবন। তবে পরোক্ষভাবে ভোটের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেও ওই ‘ধোঁয়াশা’ কোনও রকম প্রভাব ফেলেনি হলদিয়ার দৃষ্টিহীনদের একটি আশ্রমের আবাসিকদের জীবনে। বরাত মতো নির্ধারিত দিনেই তারা সরবরাহ করেছে ভোটের কাজে ব্যবহৃত মোমবাতি।

পূর্ব মেদিনীপুরে নির্বাচনে ভোট কর্মীরা যে মোমবাতি, ডাস্টার, রুমাল ব্যবহার করবেন, তা তৈরির বরাত পেয়েছিল চৈতন্যপুরের বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীরা। গত ২৮ এপ্রিল সেই ‘বরাত’ সম্পূর্ণ করে তা জেলাশাসকের দফতরে পাঠিয়েছে তারা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে এবার নির্বাচনে ৩৯৮৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রেগুলির জন্য মোট ৪৭৮২ প্যাকেট মোমবাতির প্রয়োজন ছিল। প্রতি প্যাকেটে থাকবে ৬টি করে মোমবাতি। প্রতি প্যাকেটের জন্য দাম বরাদ্দ হয়েছে ৩৯ টাকা। এছাড়া, ভোটের কাজের জন্য ডাস্টার লাগবে ৯৫৬৪টি। ন’দিনের মধ্যে ওই মোমবাতি এবং ডাস্টার সরবরাহ করার বরাত ছিল বলে আশ্রমের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন স্বামী বিবেক আত্মানন্দ। যা সময় মতোই সরবারহ করা হয়েছে।

আশ্রম সূত্রের খবর, মানসী প্রামাণিক, সীমা দাস, সাম্বারি মান্ডি, মরিয়ম খাতুন, রক্তিম মণ্ডল, বিক্রম চক্রবর্তীর মতো আরও অনেক ছাত্রছাত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে ওই কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে স্বামী বিশ্বনাথানন্দ বলেন, ‘‘মোট ১৬ জন ছেলে এবং ১৯ জন মেয়ে মিলে কাজটা করেছে। ছেলেরা এখানে মোমবাতি এবং মেয়েরা ডাস্টার তৈরি করে।’’ উল্লেখ্য, দৃষ্টিহীনদের তৈরি ওই মোমবাতির চাহিদা রয়েছে। আশ্রম সূত্রের খবর, ভাল মানের প্যারাফিন দিয়েই সেগুলি তৈরি হয়।

মানসীরা বলেন, ‘‘১ মে নির্বাচন হবে ধরে নিয়েই আমরা দিনরাত করেছিলাম।’’ সীমা এবং মরিয়ামদের কথায়, ‘‘আমাদের তৈরি মোমবাতি সরকারি কাজে লাগবে জেনে ভাল লাগছে। আমাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এভাবে কাজে লাগায় খুশি।’’ সাধারণত, আপতকালীনভাবে এবং ব্যলট বাক্সের কক্ষে ওই মোমবাতিগুলি ব্যবহার করা হবে। এবং ভোটের কালি মুছতে ব্যবহৃত হবে ডাস্টার।

প্রশাসন যে তাঁদের ছেলেমেয়েদের সুযোগ দিয়েছে, এতে খুশি স্বামী বিবেক আত্মানন্দও। তিনি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের ওই মানবিক সিদ্ধান্তে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা উপকৃত হল। এই কাজের ফলে ওরা যে অতিরিক্ত উপার্জন করল, তা ওরা আগে কখনও ভাবতেই পারেনি।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘চৈতন্যপুরের ওই দৃষ্টিহীন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে তৈরি মোমবাতি, রুমাল এবং ডাস্টার এবার ভোটে ব্যবহার করা হবে। সমবায় ভিত্তিতেই ওই দৃষ্টিহীন আশ্রমের ছেলেমেয়েরা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ওই কাজ করে থাকে। ওদের এই কাজের বরাত দিয়ে সমাজ সেবাও করা হল।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 Candles
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy