কোথাও দু’টি আসনে একই প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ায় লড়াইয়ের অধিকারই হারিয়েছে দল। কোথাও আবার বয়স না দেখেই প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেওয়ায় বাতিল হয়ে গিয়েছে!
ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে যে দলের ক্ষতিই হয়েছে, তা মানছেন বিজেপির নেতারাও। তাঁদের সাফাই, শাসকদলকে ঠেকাতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে ভুল করে ফেলছে নিচুতলার কর্মীরা। আর পরিস্থিতি জটিল করে রাজনীতিতে নতুন আসা যুব কর্মীদের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে তৃণমূল।
খড়্গপুর-১ ব্লকের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে আগেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মী মুদি। পরে তিনি ওই ব্লকেরই একটি জেলা পরিষদ আসনেও মনোনয়ন জমা দেন। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্রার্থী যদি দু’টি আসনে একইসঙ্গে মনোনয়ন জমা দেন, তবে একটি আসনে তাঁর জমা দেওয়া মনোনয়ন বাতিল হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি যে আসনে পরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, সেটিই বাতিল হয়ে যাবে।
মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার বলছেন, “একই প্রার্থী দু’টি আসনে প্রার্থী হতে পারেন না। যে আসনে পরে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন সেটি বাতিল হয়ে যায়। তাই ওই প্রার্থীর জেলা পরিষদ আসনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।” এ ভাবে একটি জেলা পরিষদ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ করছেন বিজেপির জেলা নেতা গৌতম ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “এই ঘটনা আমাদের মুর্খামির ফল!”
ভুলের ফল ভোগার শেষ এখানেই নয়। মোহনপুরের সাউটিয়া ও মোহনপুর পঞ্চায়েতের একটি করে আসনে দু’জন বিজেপি কর্মী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কমিশনের নিয়মানুযায়ী প্রার্থীর বয়স ২১ বছরের উপরে হতে হবে। যদিও মনোনয়ন যাচাইয়ের সময় দেখা যায়, বিজেপির ওই দুই প্রার্থীর বয়স ২১ বছরের কম। ওই ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি শক্তি নায়েক স্বীকার করছেন, “সামান্য বয়সের তফাতে ওই দু’টি আসন আমাদের একটুর জন্য খোওয়াতে হয়েছে।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘বাস্তবে যে ভাবে তৃণমূলের সন্ত্রাস চলেছে তাতে অনেকে প্রার্থী হতে ভয় পেয়েছে। তাই যাঁরা সাহস নিয়ে এগিয়ে এসেছিল তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে। তখন এতকিছু দেখার সুযোগ হয়নি।”
প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে এই ভয়ে একই আসনে অতিরিক্ত প্রার্থী দিয়েও বিপদে পড়েছে বিজেপি। খড়্গপুর-২ ব্লকের কালিয়ারা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিণা সংসদে একটি আসনে তিনজন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। একজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকি দু’জনই প্রার্থী হতে চাওয়ায় এখন কাকে টিকিট দেওয়া হবে তা নিয়ে ‘সঙ্কটে’ পড়েছে বিজেপি।
ব্লকের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বরুণ মাজি বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য একই আসনে একাধিক প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে কে জানত!”
দলের এক মণ্ডল নেতা আবার বলছেন, “জেলা নেতারাই এ সব বুদ্ধি দিয়েছিলেন। এখন আমাদের সামলাতে হচ্ছে।”
ঘাটালের ইড়পালায় গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে এক মহিলা বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার পড়ে বুঝেছেন, তিনি আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়ার ফর্মে সই করার বদলে বিজেপি প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন। ভুলের কথা অবশ্য স্বীকার করছেন বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠিক জেলা সভাপতি শমিত দাস। তিনি বলছেন, “কিছু ভুল তো হচ্ছেই! তাই আফশোস হচ্ছে।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘এই ভুলের কারণ হচ্ছে তৃণমূল ও প্রশাসন। ওরা এত অস্থিরতা তৈরি করছেন যে আমাদের দলের যুবরা সে সব সামলাতে গিয়ে কিছু ভুল করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy