E-Paper

একাদশের পরীক্ষাতেও গরহাজির বহু

যেমন কাঁথি শহরের হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে নথিভুক্ত হয়েছিল ২৭৬ জন ছাত্রী। প্রত্যেকে ট্যাবের টাকা পেয়েছে।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫ ১০:০৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের ট্যাবের টাকা অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বলে অভিযোগ ওঠায় হইচই পড়েছিল গত বছর নভেম্বরে। সেই ঘটনার মাস তিনেকের ব্যবধানে দ্বাদশ শ্রেণিতে ট্যাবের টাকা পাওয়ার পরেও উচ্চ মাধ্যমিকে 'গর হাজির' ছিল বহু পড়ুয়া। এ বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল একাদশ শ্রেণিতেও।

এই বছর থেকেই প্রথম ট্যাবের টাকা দ্বাদশের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে একাদশ শ্রেণিতে। সেই টাকা নেওয়ার পরেও একাদশের দ্বিতীয় সেমিস্টারে বহু পড়ুয়া অনুপস্থিত থেকেছে বলে অভিযোগ। ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তরুণের স্বপ্ন' প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক মহলে।

প্রসঙ্গত, করোনা কালে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই সময় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার্থে ট্যাব কেনার জন্য ছাত্র পিছু ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় 'তরুণের স্বপ্ন'। এ বছর দ্বাদশের পাশাপাশি একাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের ও পরীক্ষার আগে ট্যাব কেনার টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত ১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। তখনই দেখা যায়, জেলার প্রায় সব স্কুলেই কমবেশি অনেকে ট্যাবের টাকা পাওয়ার পরেও পরীক্ষায় বসেনি।

যেমন কাঁথি শহরের হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে নথিভুক্ত হয়েছিল ২৭৬ জন ছাত্রী। প্রত্যেকে ট্যাবের টাকা পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা দিচ্ছে ২৬৯ জন। একই রকম ভাবে কাঁথি -১ ব্লকের নয়াপুট সুধীর কুমার হাইস্কুলে ১৫৪ জন টাকা পেয়েছে। পরীক্ষা দিচ্ছে ১৩২ জন। কাঁথি-৩ ব্লকের বনমালী চট্টা হাইস্কুলে ৭২ জন ছাত্র টাকা পেয়েছে। পরীক্ষায় বসেছে ৬৮ জন। দিঘা দেবেন্দ্র লাল জগবন্ধু শিক্ষা সদনেও ট্যাবের টাকা পাওয়ার পর বেশ কয়েক জন পড়ুয়া একাদশের পরীক্ষা দিচ্ছে না।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, বহু পড়ুয়া ট্যাবের টাকা পাওয়ার পর ইতিমধ্যে কর্মসূত্রে ভিন‌্ রাজ্যে চলে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেড মাস্টার অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেস অ্যাসোসিয়েশন’ এর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক মৃন্ময় মাঝি বলেন," ট্যাব কেনার টাকা দিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা অসম্ভব। বরং আমাদের ধারণা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিকাঠামো বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়া হোক।’’

প্রধান শিক্ষক সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রীতি রঞ্জন মাইতির কথায়, ‘‘রাজ্যে কর্মসংস্থান কোথায়! উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর কোথায় যাবে, কী করবে তা নিয়েই দিশেহারা যুবসমাজ। তাই সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা নিয়েও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না তারা।’’ পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকার এবং শাসক দলকে দায়ী করে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের অভিযোগ,"শুধুমাত্র ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে চাইছে শাসক দল। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার নামে তরুণ-তরুণীদের নিজেদের অনুগত করে রাখতে চাইছে।’’ যদিও বিজেপির তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই ট্যাব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে বিজেপির রাজনীতি খুঁজে নিম্নরুচির পরিচয় দিচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Contai

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy