প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। গোটা দেশের মতো স্বাধীন ভারতে প্রথম মহাকুম্ভে স্নান করতে পূর্ব মেদিনীপুর থেকেও হাজার হাজার মানুষ গিয়েছেন। আর তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। তবে খুবই ‘সন্তর্পণে’। অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা-পর্ব থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েই সম্ভবত তারা এ বার শোরগোল করছে না।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একটি সূত্রের খবর, এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি বাসিন্দা মহাকুম্ভে গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে। প্রান্তিক এলাকা থেকে কেউ বাসে, গাড়ি ভাড়া করে, ট্রেনে প্রয়াগরাজ যাচ্ছেন। এঁদের এলকাট বড় অংশের জন্য সব কিছু আয়োজন করে দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। শুক্রবারই চণ্ডীপুর থেকে বাসে জেলার ৫০ জন তীর্থযাত্রী মহাকুম্ভের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাঁদের কয়েকজন জানাচ্ছেন, প্রয়াগরাজে কোথায় উঠবেন, কীভাবে পূণ্য স্নান করবেন, সে সব কিছু বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে যাচ্ছেন সঙ্ঘের লোকজন।
সাতমাইলের বচ্ছিপুর থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে মহাকুম্ভে যান একদল পূণ্যার্থী। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাদের। এ ব্যাপারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিনিধি তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বজরং সংযোজক দীপক বলেন, ‘‘জেলা থেকে দু-শতাধিক বাসিন্দাকে প্রয়াগরাজে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছি। আমাদের যে তাঁবু রয়েছে, সেখানে রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছে। চা, কফি, গরম জলের পাশাপাশি, নিজেদের খাদ্যাভাস অনুযায়ী খাবার পেয়েছেন ওঁরা।’’
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অযোধ্যায় রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় ‘রামলালা দর্শনে’ লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড় নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছিল গেরুয়া শিবির। এ জন্য ছিল বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা। বাড়ি বাড়ি প্রসাদী চাল বিতরণ করা হয়েছিল। উদ্যোগী হয়েছিল সঙ্ঘ শিবিরও। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই রাম মন্দির কেন্দ্রের শাসকদলকে ভোট প্রচারের হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছিল। তবে লোকসভা নির্বাচনে গোটা বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি ঘটেছে। একই ধারা দেখা গিয়েছে অযোধ্যাতেও।
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মহাকুম্ভের আবেগ দিয়ে ভোট বাক্সে নিজেদের পক্ষে সমর্থন তুলতে বঙ্গ বিজেপি মরিয়া বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে রাম মন্দিরের সময়ের বিষয়টি মাথায় রেখে সঙ্ঘ-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি যেন বাড়তি সতর্ক। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত গৌরাঙ্গ খাঁড়া বলেন, ‘‘সঙ্ঘ সরাসরি কিছু করছে না। বিভিন্ন যোজনার মাধ্যমে কিছু মানুষ মহাকুম্ভে গিয়েছেন। মহাকুম্ভ নিয়ে একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। তার টানেই মানুষ ছুটে যাচ্ছেন।’’ গোটা বিষয়ে তৃণমূলের জেলা (কাঁথি) সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলেন, ‘‘হিন্দুত্বের আবেগ রাম মন্দিরের সময়েও সামনে রেখে বিজেপি ভোট প্রচার করছিল। মানুষ তার বিপক্ষে জনমত দিয়েছে। এবারও যদি সে রকম কিছু ঘটে, তবে বাংলায় বিজেপিকে আর খুঁজে পাওয়াযাবে না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)