চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। বুধবার পরীক্ষা ছিল জীবন বিজ্ঞানের। পরীক্ষা চলকালীন পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে প্রথমে নিজেদের নানা কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলি। তবে মহাকুম্ভ নিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রতিবাদে নিজেদের পূর্বের সিদ্ধান্ত ভুলে বুধবার পথে নামলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে দিল জেলার একাধিক হিন্দত্ববাদী সংগঠন। কোথাও সকাল থেকেই করা হল রাস্তা অবরোধ। তো কোথাও পরীক্ষার কথা ভেবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন হয়েছে বিকেলে।
প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে সম্প্রতি পদপিষ্ট হওয়া বা নয়া দিল্লিতে পুণ্যার্থীদের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে বিধানসভায় মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মহাকুম্ভ আমি নাই বা বললাম, ওটা মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে! মৃত্যুকূপের মতো।’’ ওই মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা করেছে গেরুয়া শিবির। এ দিন সকাল ১১টা থেকে তমলুকের শঙ্করআড়া বাস স্টপেজে হলদিয়া-মেচেদা সড়ক অবরোধ করেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। অবরোধে নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির তমলুক নগর মণ্ডল সভাপতি অনিন্দ্য দাস, প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত চৌধুরী ও পুরসভার কাউন্সিলর শবরী চক্রবর্তী। প্রায় ২০ মিনিট ধরে অবরোধের পর মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। অবরোধের জেরে হলদিয়া-মেচেদা রুটের বিভিন্ন গাড়ি আটকে পড়ে।
মেচেদা বাজারের কাছে পাঁচ মাথার মোড়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে অবরোধের নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি নেতা বামদেব গুছাইত, জেলা পরিষদ পূর্ণিমা দাস, বিজেপির তমলুক-১ মণ্ডলের নেতৃত্ব। এখানে সকাল ১১ টা থেকে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে অবরোধ হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। অবরোধ হয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কাঁকটিয়া বাজারে, চৌরাস্তায় বাসস্ট্যান্ডের কাছে। বিকেল ৫টা নাগাদ নন্দকুমার বাজারে মিছিল করেন বিজেপি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। কর্মসূচিতে ছিলেন বিজেপির নন্দকুমার বিধানসভা আহ্বায়ক সুকুমার বেরা, ব্লকের নেতা রাজু দাস।
এ দিন সকালে কাঁথিতেও গেরুয়া শিবিরের কর্মসূচি ছিল। তবে তা বাতিল করে বিকেলে ক্যানালপাড় থেকে একটি বড় আকারের প্রতিবাদ মিছিল করেন বিজেপি কর্মীরা। মমতাকে ধিক্কার জানিয়ে সব হিন্দুকে এক হওয়ার বার্তা দিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা সনাতনী সংস্কৃতি এবং ভাবাবেগের উপর মুখ্যমন্ত্রী আঘাত করেছেন।’’ এখানেও মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করেন বিজেপি কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রামনগর, নাচিন্দাতেও বিজেপি প্রতিবাদ মিছিল করেছে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীকে মুসলিম লীগের নেত্রী বলেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এর প্রতিবাদে এ দিন নন্দীগ্রামে ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গের নেতৃত্বে পাল্টা মিছিল করেন দলীয় কর্মীরা।
সব মিলিয়ে পরীক্ষার আবহে সকালের অবরোধে আমজনতা ভোগান্তির শিকার হন।বিজেপির এভাবে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে সমালোচনা করছে জেলা তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা (তমলুক) সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে না পেরে ছদ্মবেশ ধারণ করে সড়ক অবরোধ করছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে এভাবে সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে।’’ যদিও জেলা পরিষদে বিরোধী দলনেতা বামদেব গুছাইতের দাবি, ‘‘আমরা খুব অল্প সময়ের জন্য প্রতীকী অবরোধ করেছি।’’ আর বিজেপির জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘কাঁথিতে পরীক্ষার শেষে কর্মসূচি হয়েছিল। মাইক বাজানো হয়নি। যানজট যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও দলের কর্মীদের আগাম সতর্ক করা হয়েছিল।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)