Advertisement
E-Paper

ফেসবুকে পোস্ট, রাতেই রক্ত দিতে ছুটলেন যুবক!

দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির পরে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তারই ফাঁকে চোখ রেখেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুকে একটা ছোট্ট আর্জিতে চোখ আটকে যায় সুতাহাটার উত্তর রানিচকের বাসিন্দা রাজেন্দ্র দাসের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির পরে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তারই ফাঁকে চোখ রেখেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুকে একটা ছোট্ট আর্জিতে চোখ আটকে যায় সুতাহাটার উত্তর রানিচকের বাসিন্দা রাজেন্দ্র দাসের। এক মহিলার জন্য রক্তের প্রয়োজন হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে! আর দেরি করেননি রাজেন্দ্র। ফোনে রোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাতে ১টা নাগাদ তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন বাড়ি থেকে।

রবিবার বিকেলে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন শম্পা পাতি। সুতাহাটা ব্লকের দুরফাবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শম্পার পরিবার সূত্রের খবর, শম্পার অস্ত্রোপচারের জন্য ‘ও’ নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ওই গ্রুপের রক্ত ছিল না। রাত ১২টা নাগাদ কার্যত মাথায় হাত পড়ে শম্পার পরিজনের। বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেও রক্ত জোগাড় করা যায়নি।

বিষয়টি জানাজানি হতেই ফেসবুকে রক্ত চেয়ে পোস্ট করে একটি সংস্থা। আর তা দেখে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ রোগীর স্বামী রঞ্জন পতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন পেশায় গাড়ি চালক রাজেন্দ্র। তাঁর বাড়ি থেকে হাসপাতাল ১২ কিলোমিটার দূরে। অত রাতে সেখানে যাওয়ার কোনও গাড়িও নেই। তাই বাড়ি থেকে হাঁটা শুরু করেন রাজেন্দ্র। তবে দেড় কিলোমিটার দূরে চৈতন্যপুরে পৌঁছনোর পরে রোগীর পরিবার তাঁকে ফোন করে জানান, রক্তের সমস্যা মিটেছে। আর হাসপাতালে আসতে হবে না।

বাড়ি ফিরে যান রাজেন্দ্র। তবে একটু পরেই তিনি ফের ফোন পেয়েছিলেন। ও প্রান্তে থেকে ভেসে এসেছিল শম্পার পরিজনের আকুতি, ‘‘দাদা, রক্ত মিলছে না। আপনাকে লাগবে। দয়া করে আসুন।’’ দ্বিধা না করে ফের হাসপাতালের উদ্দেশ্যে হাঁটা লাগিয়েছিলেন রাজেন্দ্র। তাঁকে আনার জন্য হাসপাতাল থেকে মোটরবাইকে শম্পার পরিজনেরাও এসেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে রাজেন্দ্র ফের দু’কিলোমিটার পথ হেঁটে ফেলেছেন।

আরও পড়ুন: মা-কে মার, থানা জানল ফেসবুকে

এত কাণ্ডের পরে অবশ্য রাজেন্দ্রকে রাতে হাসপাতালে যেতে হয়নি। ফোনে জানা যায়, শম্পার অস্ত্রোপচার হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। এ দিন রাজেন্দ্র বলেন, ‘‘গাড়ি চালাই। ওই দিন গাড়ি নিয়ে কলকাতা গিয়েছিলাম। সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে রাতে ফেসবুক করছিলাম। তখনই রক্তের পোস্ট দেখেছিলাম।’’

রক্ত হয়তো দিতে হয়নি, কিন্তু রাজেন্দ্রর দায়বদ্ধতায় পঞ্চমুখ সকলে। শম্পার স্বামী রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘রক্ত পাচ্ছিলাম না। নানা জায়গায় ফোন করেছি। কিন্তু সাড়া মেলেনি। এক জন অপরিচত হয়েও উনি যেভাবে দু- দু’বার ছুটে এসেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। মানবিকতা এখনও রয়েছে আমাদের মধ্যে।’’ যে সংস্থা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল, তার তরফে মাধব পড়ুয়া বলেন, ‘‘উনি অত রাতে যা করেছেন তার তুলনা হয় না। বিপদে সময় আর নিজের ক্লান্তি উনি গুরুত্ব দেননি।’’

যাঁকে ঘিরে এত প্রশংসা, সেই রাজেন্দ্রর কথায়, ‘‘ওই পরিস্থিতিতে এমন রোগীকে যে কারও বাঁচাতে ইচ্ছে করবে। তাই রাত বলে কিছু মনেই হয়নি। বেরিয়ে পড়েছিলাম!’’

Facebook Boy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy