ফাইল চিত্র।
পাঁশকুড়া কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাহারুল আলি খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) করল কলকাতা হাইকোর্ট।
শুক্রবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি কৌশিক চন্দের ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতার স্পেশ্যাল পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিমকে সিটের প্রধান নিযুক্ত করেছেন। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ওই আইপিএস অফিসার নতুন করে তদন্ত করবেন এবং দলের বাকি দুই সদস্য কে হবেন, তা ঠিক করবেন।
দুর্ঘটনায় নয়, তাঁর ছেলে সাহারুলকে খুন করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন পাঁশকুড়ার আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আক্রম আলি খান। তাঁর আইনজীবী সুদীপ রায় এবং শ্রাবণী সরকার জানান, ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সাহারুল। রাত আটটাতেও বাড়ি না ফেরায় তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পরিবার। কিন্তু করা যায়নি। রাত ১২টা নাগাদ দাসপুর থানা থেকে আক্রমকে জানানো হয়, ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে জগন্নাথপুর বাস স্টপের কাছে ওই যুবকের দেহ পড়ে রয়েছে। ট্রাকের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
মৃতের পরিবারের তরফে আইনজীবীরা জানান, ময়নাতদন্তের পরে সাহারুলের অন্ত্যেষ্টির সময় দেখা যায় মৃতদেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরিবারের সন্দেহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু নয়, খুনই করা হয়েছে সাহারুলকে। সাহারুলের এক শুভানুধ্যায়ী তাঁর পরিবারের হাতে একাধিক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ তুলে দেন। সেই সব ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ দুর্ঘটনার কথা বললেও সাহারুলের মোটর সাইকেলটি পুরোপুরি অক্ষত। এমনকী সাহারুলের প্যান্টের পকেটে থাকা তাঁর মোবাইল ফোনটিও অটুট রয়েছে। পুলিশের কথামত ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে যে ধরনের আঘাত লাগার কথা মৃতদেহে তা নেই। সাহারুলকে স্থানীয় এক পানশালায় নিয়ে গিয়ে নেশা করানো হচ্ছে এমনও ছবি দেখা গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন পাঁশকুড়া কলেজে তাঁর পরিচিত এক যুবকের ঘনিষ্ট অন্য এক যুবক। একটি মোটরবাইকের মাঝখানে বসিয়ে সাহারুলকে নিয়ে যাচ্ছেন ওই দুই যুবক। অন্য একটি ফুটেজে দেখা যায়, তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। পরিবারের অভিযোগ, দাসপুর থানা খুনের অভিযোগ পেয়েও এফআইআর দায়ের করেনি।
সাহারুলের পরিবারের পক্ষ থেকে নিম্ন আদালতে খুনের অভিযোগ জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু যে সাতজনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ। তদন্তের কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মামলা করেন সাহারুলের বাবা।
হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই রাজ্যকে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তদন্তের তদারকি করতে। আইনজীবীরা জানান, মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উল্টে তাদেরই মামলার সাক্ষী করে নিম্ন আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয় পুলিশ। জানিয়ে দেয় নেশা করে দুর্ঘটনার জেরে মারা গিয়েছেন সাহারুল।
এর বিরুদ্ধে জেরে ফের হাইকোর্টে মামলা করেন সাহারুলের বাবা। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সাহারুলের বাবা আক্রমকে নির্দেশ দেন, পুলিশের তদন্তে অসন্তুষ্ট হলে নিম্ন আদালতে সেই অসন্তোষের কথা জানাতে। বিচারপতি মান্থার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন ওই যুবকের বাবা। তার প্রেক্ষিতেই শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট সিট গঠনের নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy