Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি-অসুর বধের বার্তা মণ্ডপে মণ্ডপে

জেলায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত দু’শো ছুঁইছুঁই। রোজই ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। অবস্থা দেখা দুর্গাপুজোতেও সচেতনতামূলক প্রচারে জোর দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যে এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শহর- গ্রামের বড় পুজো মণ্ডপগুলোর সামনে সচেতনতামূলক ফেস্টুন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০১
সচেতনতায়: পুজোয় বিলি করা হবে এই লিফলেট। নিজস্ব চিত্র

সচেতনতায়: পুজোয় বিলি করা হবে এই লিফলেট। নিজস্ব চিত্র

দেবী দশভুজা তো মহিষাসুরকে বধ করেছেন। কিন্তু পুজোর আগে জেলা জুড়ে যে ডেঙ্গি-অসুরের দাপট দেখা দিয়েছে, তাকে বধ করবে কে! তারই উত্তর খুঁজছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের স্বাস্থ্যকর্তারা।

জেলায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত দু’শো ছুঁইছুঁই। রোজই ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। অবস্থা দেখা দুর্গাপুজোতেও সচেতনতামূলক প্রচারে জোর দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যে এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শহর- গ্রামের বড় পুজো মণ্ডপগুলোর সামনে সচেতনতামূলক ফেস্টুন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, দর্শনার্থীদের লিফলেটও দেওয়া হবে। যাতে জানানো হবে, মশাবাহিত রোগ এড়াতে কী করণীয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুজোতেও সচেতনতামূলক প্রচার চলবে। ইতিমধ্যে কিছু পরিকল্পনা হয়েছে। বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ফেস্টুন থাকবে। লিফলেটও বিলি হবে।”

গতবার ঘাটালের একটি পুজোর থিমই ছিল ডেঙ্গি। মশার আদলে তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ। পুজোয় এমন থিম করার জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু। জেলার মধ্যে এ বার খড়্গপুর শহরেই এই রোগের প্রকোপ বেশি। পরিস্থিতি দেখে পুরকর্তারা ঘোষণা করেছেন, শহরের কোনও পুজোর থিমে ডেঙ্গি- সচেতনতা উঠে এলে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করা হবে। তেমন হলে পুরসভার পক্ষ থেকে আর্থিক কিছু সাহায্যও করা হবে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের কথায়, “ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষ সচেতন না হলে মশাবাহিত এই রোগ ঠেকানো কঠিন। শহরের যে সব পুজোর থিমে ডেঙ্গি- সচেতনতা থাকবে, সেই সব পুজো কমিটিকে পুরসভা পুরস্কৃত করবে। আমরা পুজো কমিটিগুলোকে এটা জানিয়েও দিয়েছি।” পুরসভা মনে করছে, পুজোর থিমে ডেঙ্গি- সচেতনতা উঠে এলে তা সচেতনতা প্রচারে আলাদা মাত্রা পাবে।

থিম অনেক আগেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারে পুরসভাকে অবশ্য সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে পুজো কমিটিগুলোও। আদি পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, “পুরসভা ফেস্টুন-ব্যানার দিলে তা আমরা মণ্ডপের সামনে রাখব। এটা তো আমাদের কর্তব্যও।” বিবেকানন্দপল্লী পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা অমিত হালদারের কথায়, “ডেঙ্গি প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি। মণ্ডপের সামনে ফেস্টুন- ব্যানার থাকলে পুজো দেখতে আসা মানুষজন তা দেখতেও পারবেন। সচেতন হবেন।” কৌশিক, অমিতদের কথায়, “এখন পুজোর থিম অনেক আগে ঠিক হয়ে যায়। ফলে, থিমে আর কিছু করা সম্ভব নয়। তবে সচেতনতামূলক প্রচারে সব রকম সহায়তা করা হবে।” এক পুরকর্তার কথায়, “পুজো কমিটিগুলোর এই সহায়তাও কম কি। আমরা ফেস্টুন- ব্যানার দেবো।” জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার স্বীকারোক্তি, “ডেঙ্গি নিয়ে চিন্তার শেষ নেই! পুজোর ক’দিনও এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। জেলায় যে ডেঙ্গির প্রকোপ এ বারও এতটা হবে তা শুরুতে বোঝা যায়নি।” তিনি বলছিলেন, “দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছেন। ডেঙ্গি-অসুরকেও বধ করতে হবে। মানুষই ডেঙ্গিকে বধ করবেন! তার আগে সকলকে সমান সচেতন হতে হবে। পুজোতেও ডেঙ্গি নিধনযজ্ঞ চলবে!”

পুজো মণ্ডপের সামনে রাখা ফেস্টুন কিংবা বিলি করা লিফলেট ঠিক কি জানানো হবে? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, কি ভাবে সতর্ক থাকা উচিত, ডেঙ্গি প্রতিরোধে কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়, এ সবই জানানো হবে। শোয়ার সময় মশারি টাঙানোর পরামর্শ দেওয়া হবে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “বহু মানুষ পুজো দেখতে বেরোন। ফলে, খুব সহজেই তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছবে। মূলত ডেঙ্গির ক্ষেত্রে কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে, কি ভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়ে, সাবধানতার জন্য কি করা প্রয়োজন প্রভৃতিই পুজো দেখতে বেরোনো মানুষের কাছে পৌঁছনো হবে সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে।” এখন বিভিন্ন এলাকায় জ্বর- সর্দি- কাশির প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। ফের নতুন করে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচারে এও জানানো হবে, ডেঙ্গির মশা জলে জন্মায়। বংশবৃদ্ধি করে। তাই কোনও জায়গায় জল জমতে দেওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি, মশার কামড় এড়াতে শুধু রাতে নয়, দিনেও ঘুমনোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত। জেলার ওই স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “মানুষ সচেতন না- হলে এই রোগ প্রতিরোধ করা কঠিন।”

Dengue Mosquitos ডেঙ্গি মেদিনীপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy