Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হৃৎপিণ্ডে কৃমি, চিড়িয়াখানায় এনেও বাঁচল না নেকড়ে

বৃহস্পতিবার দিনভর পূর্ণবয়স্ক পুরুষ নেকড়েটি ঝাড়গ্রামের সাতটি গ্রামে হানা দিয়ে ১০ জনকে কামড়ে জখম করে দিয়েছিল।

নিথর: ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় নেকড়ের দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিথর: ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় নেকড়ের দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫০
Share: Save:

উদ্ধার করেও বাঁচানো গেল না। শুক্রবার সকালে ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় খাঁচার মধ্যেই মারা গেল নেকড়েটি।

বৃহস্পতিবার দিনভর পূর্ণবয়স্ক পুরুষ নেকড়েটি ঝাড়গ্রামের সাতটি গ্রামে হানা দিয়ে ১০ জনকে কামড়ে জখম করে দিয়েছিল। ঝাড়গ্রামের কেঁউদিশোল গ্রামের যুবক বুধুরাম মাহালির নেতৃত্বে এলাকাবাসী নেকড়েটিকে কব্জা করে ধরে ফেলেন। সন্ধ্যায় বনকর্মীরা নেকড়েটিকে খাঁচাবন্দি করে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যান। প্রাণিচিকিৎসকরা নেকড়েটিকে শুশ্রূষা করেন। নেকড়েটির শরীরের বাইরে তেমন আঘাতের চিহ্ন ছিল না। রাতে দু’কেজি মুরগির মাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন সকালে নেকড়েটি খাঁচায় বসে ঝিমোতে থাকায় সন্দেহ হয় চিড়িয়াখানা কর্মীদের। সকাল পৌনে দশটা নাগাদ চিড়িয়াখানার কর্মীদের চোখের সামনেই নিথর হয়ে যায় নেকড়েটি। খবর পেয়ে আসেন ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সহ-অধিকর্তা চঞ্চল দত্ত ও প্রাণী চিকিৎসক সুলতা মণ্ডল। তাঁরা পরীক্ষা করে নেকড়েটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

নেকড়েটির ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে প্রাণিচিকিৎসকদের। চঞ্চল বলেন, ‘‘নেকড়েটির হৃৎপিণ্ডে অসংখ্য কৃমি (হার্ট ওয়ার্ম) পাওয়া যায়। এটি বিরল উপসর্গ। তবে নেকড়েটির রেবিস হয়নি। নেকড়েটির বেশ কয়েকটি পাঁজরের চিড় ধরেছিল। সেই সঙ্গে ফুসফুস ও কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছিল।’’ প্রাণিচিকিৎসকদের অনুমান, নেকড়েটিকে ধরার সময় জব্দ করার জন্য গ্রামবাসীরা তার উপরে চেপে গিয়ে সজোরে চাপ দেওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। এ দিন ময়নাতদন্তের পরে নেকড়ের দেহ স্থানীয় ধবনি বিটের জঙ্গলে পুঁতে দেওয়া হয়।

কেন নেকড়েটি এমন আচরণ করেছিল?এতজনকে কামড়ালো কেন? বনকর্মীদের অনুমান, নেকড়ের পালে আরও কিছু শাবক রয়েছে। ওই শাবকদের খাবারের জোগান দিতে সম্ভবত পালের দলপতি পুরুষ নেকড়েটি লোকালয়ে ঢুকেছিল। তারপর গ্রামবাসীর প্রতিরোধে নেকড়েটিও আক্রমণাত্মক হয়ে পর পর বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের আক্রমণ করতে থাকে।

নেকড়ের হামলায় জখম দশজনের মধ্যে তিন মহিলা সহ পাঁচজন ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, ‘‘ওষুধ দোকানের মাধ্যমে কলকাতা থেকে ৩০টি অ্যান্টি রেবিজ ভ্যাকসিন আনা হয়েছে।’’

কলকাতায় রেফার’ হওয়া মালিনী মাহাতোকে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে শিমূলডাঙা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন পরিজনেরা। মালিনী আপাতত সুস্থ আছেন। মালিনীর দেওর দীনেশ মাহাতো বলেন, ‘‘ক্ষত সারলে বৌদিকে প্লাস্টিক সার্জারি করানোর জন্য নিয়ে যেতে বলেছেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Zoo Wolf
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE