Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রান্নার গ্যাসে ছুটছে গাড়ি

ভর্তুকির এলপিজি সিলিন্ডার লাগানো হচ্ছে বেআইনি কাজে। ভাড়াগাড়ির সিএনজি সিলিন্ডারে কীভাবে ভরা হচ্ছে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের গ্যাস— খোঁজ নিয়ে দেখল আনন্দবাজারশহরে নজরদারি বেশি। তাই শহর থেকে দূরে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ ভাবেই সিএনজির বদলে গাড়িতে ভরা হচ্ছে রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজি।

এ ভাবেই এলপিজি সিলিন্ডার থেকে ভরা হয় গ্যাস। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই এলপিজি সিলিন্ডার থেকে ভরা হয় গ্যাস। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

ছোট গুমটি। ঠাসাঠাসি করে রাখা ১০-১২টি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার। গুমটির কাছে এসে দাঁড়াল একটি গাড়ি। পিছনের দরজা খুলতেই দেখা গেল গা ড়িতে লাগানো রয়েছে একটি সিএনজি সিলিন্ডার। এরপর গুমটি থেকে বার করে আনা হল একটি এলপিজি সিলিন্ডার। সঙ্গে ছোট একটি টুলু পাম্প। সেই পাম্পের একটি পাইপ নিয়ে এলপিজি সিলিন্ডারের মুখে ভাল্‌ব লাগানো ক্যাপ এঁটে সিলিন্ডার উল্টে দেওয়া হল। তার পরে পাম্প থেকে অন্য একটি পাইপ নিয়ে সিএনজি সিলিন্ডারে একই ভাবে ক্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হল। পাম্প চালু করতে নিমেষে এলপিজি ভরে গেল সিএনজি সিলিন্ডারে।

শহরে নজরদারি বেশি। তাই শহর থেকে দূরে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ ভাবেই সিএনজির বদলে গাড়িতে ভরা হচ্ছে রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজি।

খড়্গপুর, মেদিনীপুর-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি এলাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে বেআইনি কারবার। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজিতে থাকে মূলত প্রোপেন বা বুটেন। সহজে বাতাসে মিশতে চায় না এই গ্যাস। তার উপর সামান্য বাতাসের সংস্পর্শে জ্বলতে সক্ষম এই গ্যাস। সেই সঙ্গে এই গ্যাসে অধিক পরিমাণ কার্বন তৈরি হয়। তাই এই গ্যাস গাড়িতে ব্যবহার করলে ইঞ্জিনে কার্বন জমে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

কী ভাবে চলছে বেআইনি কারবার? প্রথমে সিএনজি বা এলপিজি সিলিন্ডারের কিট গাড়িতে লাগিয়ে পরিবহণ আধিকারিকের দফতর থেকে অনুমতি আদায় করে নেওয়া হচ্ছে। পরে সিএনজি সিলিন্ডারে ভরা হচ্ছে রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজি। খড়্গপুরের ভাড়া গাড়ির ব্যবসায় যুক্ত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “গোটা জেলায় এখন বহু গাড়ি পেট্রল, ডিজেল থেকে গ্যাসে রূপান্তর করিয়ে নিচ্ছে। অবশ্য পরিবহণ দফতর থেকে সিএনজি বা এলপিজি কিট দেখিয়েই অনুমতি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ গাড়ি ছুটছে এলপিজি ভরে। বাড়িতে অথবা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অবৈধ দোকানেই রান্নার গ্যাস ভরছে। এক কথায় বিপজ্জনক। নজরদারি প্রয়োজন।”

পরিবহণ ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, সমস্যা শিকড় গভীরে। তাঁদের অভিযোগ, পরিকাঠামো উন্নয়ন না করেই গাড়িতে সিএনজি এবং এলপিজি ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে জেলা পরিবহণ দফতর। গোটা জেলায় একটিও এলপিজি পাম্প নেই। মেদিনীপুরের ধর্মার কাছে একটি বৈধ সিএনজি পাম্প রয়েছে। কিন্তু সকলের পক্ষে সেখানে গিয়ে গ্যাস ভর্তি করানো সম্ভব নয়। স্বাভাবিক ভাবেই যততত্র গজিয়ে উঠছে রান্নার গ্যাস থেকে সিএনজি ভর্তি করানোর গুমটি। এ প্রসঙ্গে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘নির্দেশিকা মেনে আমরা এলপিজি, সিএনজি অনুমতি দিচ্ছি। পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাম্প নেই এটা ঠিক। এ বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে।’’

পাম্পের সংখ্যা হয়তো বাড়বে। কিন্তু সে তো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। প্রতি মুহূর্তেই তো রয়েছে বিপদের সম্ভাবনা!

দমকলের ডিভিশনাল অফিসার দীপঙ্কর পাঠক বলেন, “এ ভাবে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রান্নার গ্যাস গাড়িতে ভরলে বিপদ যে কোনও সময় হতে পারে। আমাদের কাছে এমন পরিকাঠামো নেই যে অভিযান চালাব। কেউ অভিযোগ দিলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”

ঝুঁকি নিয়েই চলছে ব্যবসা। জীবনের বাজি রেখেই রাস্তায় চলছে গাড়ি।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cars CNG Gas Cooking Gas Illegal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE