Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বন্যার ক্ষতি মাপতে পরিদর্শন

ঘরদোর নেই, নালিশ শুনল কেন্দ্রের দল

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের কাছে এক এক করে এ সব বলতে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যান ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান, অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগী। সুলেখাদেবীর কথা শেষ হতেই মহকুমাশাসক তাঁদের আশ্বস্ত করে বললেন, “আপনাদের বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভাবছেন।”

সরেজমিনে: ছবি তুলে নিচ্ছেন প্রতিনিধিরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

সরেজমিনে: ছবি তুলে নিচ্ছেন প্রতিনিধিরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০৬
Share: Save:

দুপুর থেকেই শিলাবতীর বাঁধের উপর অপেক্ষা করছিলেন প্রতাপপুরের বাসিন্দারা। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ এলাকা পরিদর্শনে আসেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। হাতের কাছে পেয়েই তাঁদের ঘিরে ধরেন সুলেখা চৌধুরী, প্রদীপ চৌধুরী, লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধুরীরা। অভিযোগ, “আমাদের দিকে আর কারও নজর নেই। তিন মাস ধরে আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছি। মন্ত্রী এসে বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কোথায় বাড়ি?’’

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের কাছে এক এক করে এ সব বলতে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যান ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান, অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগী। সুলেখাদেবীর কথা শেষ হতেই মহকুমাশাসক তাঁদের আশ্বস্ত করে বললেন, “আপনাদের বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভাবছেন।”

প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, বহু বছর পর বন্যায় এমন ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। ঘাটাল-সহ একাধিক এলাকায় জল নামার পর দেখা গিয়েছে বেশ কিছু রাস্তা প্রায় ১০০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতি হয়েছে চাষ জমির, বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছে বসতবাড়ি। কেন্দ্রের কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য দরবার করেছে রাজ্য। সে কারণেই বৃহস্পতিবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে পশ্চিম মেদিনীপুরে এল কেন্দ্রীয় দল।

সুমিত প্রিয়দর্শী, প্রদীপকুমার আনন্দ, এসকে সাহা এবং এসকে সুমনকে নিয়ে গঠিত দলটি এ দিন সকালে মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠক করে। ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা। পরে এলাকা পরিদর্শনে যান তাঁরা। সুমিত প্রিয়দর্শী সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতেই জেলায় আসা।” প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, বন্যায় জেলার কী কী ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। ছবি-সহ রিপোর্ট পেশ করা হয়।

এ বার বন্যায় জেলার কমবেশি ২,১২৩টি মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে ঘাটাল মহকুমার ৫৯২টি, খড়্গপুরের ৮৪২টি এবং মেদিনীপুরের ৬৮৯টি মৌজা রয়েছে। ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩৯,০১৯ হেক্টর চাষের জমি।

জলের তোড়ে সেতু ভেঙে বিপত্তি দেখা দিয়েছিল কেশপুরের আনন্দপুরে। এ দিন দুপুরে সেতুটি পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় দল। ছিলেন কেশপুরের বিডিও সৌরভ মজুমদার। কত উঁচু এলাকার উপর দিয়েও জল বয়ে গিয়েছে, তা দেখানো হয় ওই দলকে। ইতিমধ্যে অবশ্য পুরনো সেতুর পাশে নতুন সেতু তৈরির বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। তবে অর্থ সংস্থান এখনও হয়নি।

জুলাইয়ের শেষের দিকে জেলায় বন্যা হয়েছিল। পরিস্থিতি খারাপ হয় ২৬ জুলাই রাতে—ঘাটালের প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ ভেঙে যায়। পর দিন ভোরে ভেসে যায় ঘাটাল শহরও। প্রতাপপুরের ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশটি পরিদর্শন করেন প্রতিনিধিরা। ভেঙে যাওয়া বাড়িগুলির ছবি তুলেন নেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পর তাঁরা যান দাসপুর-২ ব্লকের রানিচক পঞ্চায়েতের দরিঅযোধ্যা গ্রামে।

জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্যায় জেলার প্রায় এক হাজার কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও সব রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হয়নি। অর্থ চেয়ে রাজ্যের কাছে দরবার করেছে জেলা।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘জল নামার পরে রাস্তাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। কয়েকটি রাস্তা অস্থায়ী ভাবে দ্রুত মেরামত করা হবে। পরে পরে নতুন রাস্তা করে দেওয়া হবে।” সরেজমিনে সমস্ত কিছু দেখে কেন্দ্রীয় দলটি দিল্লিতে রিপোর্ট দেবে। রিপোর্ট দেখে কেন্দ্র পরবর্তী পদক্ষেপ করবে। হতে পারে অর্থ বরাদ্দও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE