Advertisement
E-Paper

বাজেটে প্রাপ্তি নামেই, জেলার মন ভরল না

দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন হওয়ার কথা আগামী ৩০ এপ্রিল। তা কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পে জোয়ার আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

কেশব মান্না, সৌমেন মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫১
Share
Save

আশাভঙ্গ হল জেলার শিল্পমহলের। সদ্য শেষ হয়েছে শিল্প সম্মেলন। লগ্নির প্রতিশ্রুতি মিলেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তারপর বুধবার বাজেটে জেলায় একাধিক প্রকল্পে সরকারের তরফে বরাদ্দের আশা ছিল। কিন্তু আশাপূরণ হয়নি। এ নিয়ে সরব বিরোধীরা।

কাঁথির কাজু শিল্পের প্রসারে ক্লাস্টার নির্মাণের দাবি এক দশকের। কিন্তু এবারেও বাজেটে এর উল্লেখ না থাকায় হতাশ ক্ষুদ্র কাজু ব্যবসায়ীরা। রসুলপুর নদীতে সেতু নির্মাণেও প্রস্তাব গিয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। অনেকেই ভেবেছিলেন সেখানেও বরাদ্দ মিলবে। কিন্তু তা হয়নি।

দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন হওয়ার কথা আগামী ৩০ এপ্রিল। তা কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পে জোয়ার আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু দিঘার পরিকাঠামো উন্নয়নে নতুন করে কোনও বরাদ্দ হয়নি। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ কুমার দাস বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে ধাক্কা খেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনেও দু’টি আসনে তৃণমূল হেরেছে। তাই পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেনি রাজ্য।’’ যদিও রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির দাবি, ‘‘দিঘা ঢেলে সাজা হচ্ছে। সমস্ত প্রকল্প আগেই চালু রয়েছে।’’

সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মৎস্যজীবী মহলে। গত বছর বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিল, ‘ব্যান পিরিয়ডে’ দু’মাস মৎস্যজীবীদের পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। গত বছর সেই সহায়তা মেলেনি। এ বছরও বাজেটে এ ব্যাপারে ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘ইতিপূর্বে আমরা প্রতিটি ব্লকে স্মারকলিপি দিয়েছি। দ্রুত সমুদ্র সাথী প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা মৎস্যজীবীদের না দেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলন চলবে।’’

এবার বাজেটে নদী বন্ধন প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। হলদি নদীর উপর হলদিয়া-নন্দীগ্রাম সেতু এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে কি না, সেই নিয়েই এখন হলদিয়া-নন্দীগ্রামে চর্চা শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে নন্দীগ্রামের তেখালির সভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, হলদিয়া-নন্দীগ্রাম সংযোগ স্থাপনের জন্য হলদিতে সেতুর চিন্তাভাবনা চলছে। ২০২১ সালে বাজেটে ওই সেতু তৈরির ঘোষণা করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘোষণা কেবল ঘোষণাতেই রয়ে গিয়েছে। বাস্তবায়ন হয়নি।

হলদিয়া-নন্দীগ্রাম সেতুর প্রস্তাবে আশার আলো দেখেছিলেন নন্দীগ্রামের কৃষকেরা। প্রতিদিন নন্দীগ্রাম থেকে আনাজ নৌকার মাধ্যমে হলদিয়াতে আনতে হয় তাঁদের। সেতু হলে সাইকেলে বা ভ্যানে সহজে আনাজ হলদিয়ায় আনা যাবে বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। বিভিন্ন কাজে নিত্যদিন নদী পারাপার করতে হয় যাঁদের, তাঁরাও স্বস্তি পেয়েছিলেন। এবারের বাজেটের পরে এঁরা সকলেই আপাতত দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটপ্রাপ্তির জন্য কল্পতরু হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রামে পরাজিত হওয়ার পরে এখান থেকে তিনি মুখ ফিরিয়েছেন। বিজেপির জেলা (তমলুক) সম্পাদক মেঘনাদ পালের কথায়, ‘‘২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী পরাজিত হওয়ার পরে নন্দীগ্রামে একবারও আসেননি। নন্দীগ্রামের মানুষ এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই হয়তো এই বাজেটে নন্দীগ্রামের জন্য কোনও কিছু বরাদ্দ করা হয়নি। হলদির সেতু করার ইচ্ছাও নেই সরকারের।’’ যদিও নন্দীগ্রামের তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য শেখ শামসুল ইসলাম বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গবাসীকে যা কথা দেন, তা বাস্তবায়িত করেন। নদী বন্ধন প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। বিজেপি উন্নয়ন করে না এবং উন্নয়ন দেখতে পায় না।’’

বুধবার রাজ্য বাজেটে শিল্প শহরের পরিকাঠামো নিয়ে তেমন কিছু বরাদ্দ করা হয়নি দেখে বেশ কিছুটা হতাশ হলদিয়াবাসী। শিল্প শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, বাম আমলে যেসব শিল্প গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে অনেকগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন করে কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি শিল্প শহরে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ শিল্পকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ছিল। সেই প্রতিষ্ঠানকেও কার্যত অকেজো করে রাখা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

East Midnapore

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}