Advertisement
E-Paper

দলেরই প্রতিরোধে পিছু হঠল বহিরাগত

গোড়া থেকেই তমলুক পুরভোটে নির্দল কাঁটা নিয়ে জেরবার ছিল তৃণমূল। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে পর্যন্ত বারবার প্রচারে নির্দলদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাতে হয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিনও সেই বিক্ষুব্ধ-নির্দলের সঙ্গে বিরোধ এড়াতে পারল না শাসক দল। নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রতিরোধে নামা দলেরই ছাত্র নেতার সঙ্গে বচসার পরে শেষমেষ পিছু হঠতে হল হলদিয়া থেকে আসা তৃণমূলের শ্রমিক নেতা শ্যামল আদকের বাহিনীকে ।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫১
প্রতিরোধ স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। শনিবার তমলুকে পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

প্রতিরোধ স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। শনিবার তমলুকে পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

গোড়া থেকেই তমলুক পুরভোটে নির্দল কাঁটা নিয়ে জেরবার ছিল তৃণমূল। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে পর্যন্ত বারবার প্রচারে নির্দলদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাতে হয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিনও সেই বিক্ষুব্ধ-নির্দলের সঙ্গে বিরোধ এড়াতে পারল না শাসক দল। নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রতিরোধে নামা দলেরই ছাত্র নেতার সঙ্গে বচসার পরে শেষমেষ পিছু হঠতে হল হলদিয়া থেকে আসা তৃণমূলের শ্রমিক নেতা শ্যামল আদকের বাহিনীকে ।

শনিবারের ঘটনাস্থল তমলুকের ৮ নম্বর ওয়ার্ড। তমলুক পুরভবনের সামনে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস সংলগ্ন বহির্বিভাগের ঘরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথ করা হয়েছিল। সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ ওই বুথের ইভিএম-এ নির্দল প্রার্থী বিশ্বজিৎ কয়ালের প্রতীকের উপর কালির ছাপ লেগে আছে বলে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। ওই মেশিনে আর ভোট হবে না বলে দাবিও করেন তৃণমূল প্রার্থী ঝড়ুপদ বর্মণ। বন্ধ হয়ে যায় ভোট গ্রহণ। প্রিসাইডিং অফিসার উপর মহলে বিষয়টি জানিয়ে দেন।

কিন্তু মিনিট পনেরোর মধ্যেই ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে এসে উপস্থিত হন হলদিয়া বন্দরের আইএনটিটিইউসি নেতা শ্যামল আদক ও তাঁর দলবল। শ্যামলবাবু সোজা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে দাবি করতে থাকেন, অন্য মেশিন এনে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ তাঁকে সরিয়ে দেয়। শ্যামল আদক বাইরে এসে অনুগামীদের নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা দাবি করেন, নির্দল প্রার্থীকে বের করে দিতে হবে। তাঁর প্ররোচনায়তেই ইভিএম-এ কালির ছাপ লাগানো হয়েছে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। নতুন ইভিএম ছাড়া ভোট নেওয়া যাবে না।

তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের উপর নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বচসা বাধে শ্যামল অনুগামীদের। এ সময়ে বাইরে থেকে এসে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সৌমেন চক্রবর্তী। অভিযোগের সুরে সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘কোনও গোলামাল ছিল না। তৃণমূলের নাম করে বাইরে থেকে এসে গোলামাল পাকানো হচ্ছে। এতে আমাদের দলের বদনাম হচ্ছে। আমরা এ সব মনব না।’’ কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয় বটে, কিন্তু ততক্ষণে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। এমনকী তৃণমূল প্রার্থী ঝড়ুপদও বলেন, ‘‘দলের একাংশ আমার বদলে নির্দল প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে। তাঁর জেরেই এই ঘটনা।’’

কিন্তু শ্যামলবাবু কেন এলেন বাইরে থেকে? ঝড়ুপদবাবুর সহজ উত্তর, ‘‘উনি তো আমাদের দলের নেতা। ভোট বন্ধ হয়ে আছে শুনে খোঁজ নিতে এসেছিলেন।’’ কিন্তু ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে ঢোকার অধিকার কি তাঁর আছে? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি তৃণমূল প্রার্থী। শ্যামলবাবু নিজেও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সাফাই, ‘‘শ্যামলবাবু তমলুকের বাসিন্দা। তাই তিনি ওখানে যেতেই পারেন।’’ শ্যামলবাবু তমলুকের বাসিন্দা হলেও ওই বুথের ভোটার নন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বুথে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা ইভিএম-এ লেগে থাকা কালি মুছে দেন। সকাল ১০টা নাগাদ ফের শুরু হয় ভোট গ্রহণ।

তমলুক পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ার্ডের সৈয়দপুর শ্রুতিনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাত নম্বর বুথে ভোট তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তোলেন নির্দল প্রার্থী। ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী তথা বিদায়ী কাউন্সিলর সর্বাণী মাইতির অভিযোগ সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে তৃণমূলের প্রচুর বহিরাগত লোকজন জড়ো হয়েছিল। তাদের হুমকি সত্ত্বেও ভোটাররা ভোট দিতে এসেছিলেন বলে দাবি করেন সর্বাণীদেবী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভোট শেষের মিনিট পাঁচেক আগে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয় এমন লোকজনকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নির্বিচারে ছাপ্পা ভোট দেয় তৃণমূলের লোকেরা। পুলিশের সামনেই চলে এই কাণ্ড।’’

তৃণমূল প্রার্থী বৈশাখী মাইতি (পড়্যা) অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য এদিন জানান, ‘‘জেলার তিন পুরসভাতেই শান্তিতে মিটেছে ভোট গ্রহণ পর্ব। তমলুকে ৮৪.৫, কাঁথিতে ৭৮.৮ এবং এগরাতে ৮৭.৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।’’ তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও দাবি ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। জেলার তিনটি পুরসভাতেই তৃণমূল পুরবোর্ড গড়বে।

বুথে কান্না। অবশেষে ভোটের আতঙ্ক কাটল বছর পঁচিশের বনগাঁর বিশ্বজিৎ সরকারের। শনিবার সকালে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কান্না জুড়ে দেন তিনি। কারণ ভোট দিতে নাকি তাঁর ভয় লাগছে। তখন ওই বুথে ছিলেন বনগাঁ থানার আইসি নন্দনকুমার পাণিগ্রাহী, বনগাঁর এসডিপিও বিশ্বজিৎ মাহাতো, মহকুমা শাসক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কান্নার আওয়াজে আইসি বেরিয়ে আসেন। বিশ্বজিৎ আইসি-কে জানান, কোনও দিন ভোট না দেওয়ায় ভোট দিতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে সেখানে হাজির বনগাঁর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমি চক্রবর্তী। তিনি ও আইসি বিশ্বজিৎকে বোঝান। এরপর আইসি-র সঙ্গে গিয়ে ভোট দিয়ে আসেন তিনি।

tamluk municipality election 2015 tamluk tmc vs independent candidates ananda mondal tamluk poll violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy