Advertisement
E-Paper

ক্লাসে মোবাইলে বুঁদ স্যর

সূত্রের খবর, প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের কাছে আগাম খবর ছিল, কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোনে সামাজিক মাধ্যমে মগ্ন থাকেন। এর ফলে দায়সারা ভাবে পড়ানো হচ্ছে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০৫:২২
অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

বইখাতা বন্ধ করে নিজেদের মধ্যে হুটোপাটি করছে শিশু পড়ুয়ারা। আর সেই ক্লাসে প্রাথমিক স্কুলের টিচার-ইনচার্জ চেয়ারে বসে একমনে মোবাইল ফোনে ফেসবুক ঘাঁটছেন। আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে এমনই দেখলেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক। শুধু কী তাই! স্কুলভবনের দোতলায় আরও একটি ঘরেও একই দৃশ্য। সেখানে আবার কয়েকজন শিশু মেঝেতে গুলি খেলছে। ক্লাস ঘরে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকও মোবাইল ফোনে বুঁদ হয়ে আছেন। পড়াশোনার পাঠ শিকেয় উঠেছে।

মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর প্রাথমিক চক্রের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আচমকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক অমরেশ কর এবং অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুপ্রিয় বর্মন। সূত্রের খবর, প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের কাছে আগাম খবর ছিল, কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোনে সামাজিক মাধ্যমে মগ্ন থাকেন। এর ফলে দায়সারা ভাবে পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু স্কুলের টিচার-ইনচার্জ নিজেই ক্লাসে মোবাইল ফোন নিয়ে মগ্ন হয়ে আছেন দেখে তাজ্জব হয়ে যান জে‌লা বিদ্যালয় পরিদর্শক। সূত্রের খবর, পরিদর্শকের উপস্থিতিও নাকি টের পাননি ওই স্কুলের দুই শিক্ষক। চরম ভর্ৎসনার পরে ওই স্কুলের সব শিক্ষককে সতর্ক করে দেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক।

এর পরই জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানোর জন্য অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। নির্দেশে বলা হয়েছে, স্কুল চলাকা‌লীন শিক্ষার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে ক্লাসের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘ক্লাসে বসে শিক্ষকরা না পড়িয়ে মোবাইলে ফেসবুক করছেন। এসব বরদাস্ত করা হবে না। ওই টিচার-ইনচার্জকে শো-কজ করা হয়েছে। এরকম করা হলে কড়া বিভাগীয় পদক্ষেপ করা হবে। পড়ুয়াদের শিক্ষার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে স্কুলে বিনোদনের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এ ব্যাপারে নির্দেশিকা পাঠানো হচ্ছে।’’ সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক স্কুলের টিচার ইন চার্জ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা তিন জন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলাম। আমি ক্লাসে মোবাইল ফোন দেখিনি। আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম। অন্য ক্লাসে কী হয়েছে জানা নেই।’’

শুধু একটি স্কুল নয়। মঙ্গলবার জেলার আরও কয়েকটি স্কুলে একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে ওই পরিদর্শক দলের। কোথাও শিক্ষকদের মোবাইল মগ্নতা বেশি কোথাওবা একটু কম। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষকদের মোবাইলে চোখ রাখতে দেখেছে পরিদর্শক দল। কয়েক মাস আগেও সাঁকরাইল ব্লকের একটি স্কুলের অভিভাবকদের একাংশ একই অভিযোগ করেছিলেন। শিক্ষাবিদের একাংশের প্রশ্ন, শিক্ষকেরাই যদি পড়ানোর সময় এ ভাবে মোবাইলে ডুবে থাকেন তা হলে তাঁরা ছাত্রদের শেখাবেন কী? পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি স্বপন পাত্র বলেন, ‘‘শিক্ষকদের শিক্ষার স্বার্থে কাজ করা উচিত। যদি কেউ এ রকম করে থাকেন সেটা ঠিক নয়। শিক্ষালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ রাখব।’’ নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক বিপদভঞ্জন দুলে বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা এ রকম আচরণ করলে সেটা মোটেই কাম্য নয়। স্কুল চলাকালীন শিক্ষকদের শিক্ষার স্বার্থে কাজ করতে হবে। এ জন্য তাঁরা দায়বদ্ধ।’’

ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট মনোবিদ দীপঙ্কর পালের মন্তব্য, ‘‘সব শিক্ষক এ রকম করেন না। পেশার প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব ঘটলে এমন আচরণ কেউ কেউ করতে পারেন। মোবাইলের প্রতি আসক্তি নেশার পর্যায়ে পৌঁছে থাকলে শুধু শো-কজ করে কোনও লাভ নেই। ওই শিক্ষকদের কাউন্সেলিং করানো প্রয়োজন। কারণ, শিক্ষকদের দেখেই পড়ুয়ারা অনুকরণ করবে।’’

Primary Education School Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy