প্রতিমা বানাচ্ছেন মোহন। নিজস্ব চিত্র।
রং-তুলি ছেড়ে কাদা-মাটি ধরেছিলেন। পুতুলের আকর্ষণে। সেই আকর্ষণেই ধারাবাহিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধরনের পুতুল। ১০১ দিন ধরে ১০১টি মাটির পুতুল। শততম পুতুলটি দেবী দুর্গার। বাংলার ঐতিহ্যশালী টেপা পুতুলের আঙ্গিকে শিল্পী মোহনলাল মান্না তৈরি করেছেন দুর্গা প্রতিমাটি।
পুতুলের ধারাবাহিকের একটি উৎস রয়েছে। এলাকায় চৈতন্যপুরের বাসিন্দা মোহনলালের শিল্পী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। লকডাউনের সময় বিভিন্ন দেশের পুতুল নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। পড়াশোনার সূত্রেই তাঁর মনে হয়, সারা পৃথিবীর পুতুল একসূত্রে গাঁথা। তাই রং-তুলি ছেড়ে কাদা-মাটি ধরলেন। হুগলি নদী তীরবর্তী কুকরাহাটি থেকে আনলেন মাটি। সেই মাটি দিয়েই ধারাবাহিক ভাবে গড়ে তুললেন একের পর এক পুতুল। আফ্রিকা, কলম্বিয়া, মিশর, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি, জার্মানি, জাপান, চিন, বাংলাদেশ-সহ বহুদেশের মাটির পুতুল তৈরি করেছেন। এই পুতুলগুলোর বৈশিষ্ট্য হল, প্রত্যেকটি ভিতর ফাঁপা এবং হাতে টেপা। মোহন বলেন, ‘‘বহু শিল্পেরই জনক পুতুল। পুতুল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি, দেশকালের বেড়া ডিঙিয়ে পুতুল চর্চা প্রসারিত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই বিষয়টি সর্বসমক্ষে তুলে ধরতেই পুতুলের সিরিজের ভাবনা।’’
বিদেশি পুতুল ছাড়াও দেশের ঐতিহ্যবাহী মহেঞ্জোদারো হরপ্পার একাধিক পুতুল তৈরি করেছেন। ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমনও অনেক পুতুল তৈরি করেছেন। দৃষ্টিনন্দন মণিপুরের পুতুল, বিষ্ণুপুরের পুতুল ও গালা পুতুলের ছাঁদে গড়েছেন তাঁর শিল্পকর্মে। মোহন জানান, বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। সেই প্রতিমাও তিনি তৈরি করেন। মোহনের বাড়ির পাশে বিখ্যাত চিত্রকর পাড়া। সেখানে ছোটবেলায় বাবা জ্যোতিরিন্দ্রের সঙ্গে যেতেন। সবিতা চিত্রকর নামে এক শিল্পীর কাজ ভাল লাগত তাঁর। সবিতা ছিলেন প্রতিবন্ধী। হাতের কাজ ছিল অসাধারণ। সবিতা তাঁকে নষ্ট হয়ে যাওয়া পুতুল দিতেন। সেখান থেকেই মোহনের শিল্পের প্রতি টান বাড়ে। তৈলচিত্রে তাঁর বিশেষ দখল রয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, পুতুলের ভুবনজোড়া আকর্ষণীয় জগৎ তাঁর সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে। তাঁর তৈরি নানা ধরনের পুতুল দেখতে অনেকেই আসেন। রাজ হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক অশোককুমার লাটুয়া এসেছিলেন এই পুতুলের সম্ভার দেখতে। তিনি বলেন, ‘‘সমাজ মাধ্যমে কিছু পুতুলের ছবি দেখেছিলাম। তাই দেখতে এলাম দেশ-বিদেশের অসামান্য পুতুল সব। শিল্পীর তৈরি করা টেপা পুতুলের আঙ্গিকে দুর্গা দুর্গতিনাশিনী অনন্য।’’
বাড়িতেই ভাটি তৈরি করছেন মোহন। কাঁচা মাটির পুতুল পোড়ানোর জন্য। মোহন বলেন, ‘‘সেন্ট জেভিয়ার্সের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চিত্রশিল্পী প্রদীপ মাইতি আমার গুরু। গুরুর আশীর্বাদ নিয়েই এগিয়ে চলতে চাই।’’ মোহন দেশ-বিদেশের নানা ধরনের পুতুল নিয়ে প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy