ঢাক-রণপা নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী রিঙ্কি দাসের প্রচারে পদযাত্রা।
নির্বাচনে অশান্তির আশঙ্কা নিয়েই শেষ হল খড়্গপুরে পুরভোটের প্রচার।
কোথাও ঢাকের তালে, কোথাও বা আবার তাসা বাজিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই প্রচারে পথে নামে কম বেশি সব প্রার্থীই। প্রচারে ভয় না পেয়ে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করার আর্জি জানান বিভিন্ন বিরোধী দলের প্রার্থীরা। যদিও বিরোধীদের আশঙ্কা, খড়্গপুরে পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নয় বুঝেই পরিকল্পিত ভাবে সন্ত্রাসের ছক কষছে শাসক দল। যদিও তৃণমূলের দাবি, নির্বাচনে বিরোধীরা অশান্তি পাকাতে জোট বাঁধছে। অবশ্য মানুষ তাদেরই ক্ষমতায় আনবেন।
এ দিন সকাল থেকেই শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই দাপিয়ে বেড়াল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার গাড়ি। এ দিন সকালে শহরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেস প্রার্থী রবিশঙ্কর পাণ্ডে নিজের ওয়ার্ডেই প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। শহরের ছোট ট্যাংরা এলাকায় তাঁর সমর্থনে তাসা দল নিয়ে মিছিল বেরোয়। এর পর রবিশঙ্করবাবু গোলবাজার মসলিন চকের একটি পথসভাতেও যোগ দেন। প্রচার শেষে রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “শেষ প্রচার সেরে মনে হচ্ছে অবাধ ভোট হলে কংগ্রেস ১৮টির বেশি আসনে জয়ী হবে। কারণ শেষ দিনেও বেশ কিছু ওয়ার্ডে মাফিয়ারা প্রচারে নেমেছে বলে খবর। তবে খড়্গপুরে রিগিং হলে মানুষ রুখে দেবে বলে আমার ধারণা।’’
বিজেপির পক্ষ থেকেও এ দিন শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পদযাত্রা বের হয়। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অনুশ্রী বেহেরার সমর্থনে গাড্ডা বস্তি এলাকায় তাসা দল নিয়ে মিছিল হয়। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুখরাজ কৌর হুড খোলা গাড়িতে করে ওয়ার্ড চষে বেড়ান। তবে প্রচারের শেষেও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না গেরুয়া শিবির। এ দিন বিজেপির শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা বলেন, “এখনও খড়্গপুরে সন্ত্রাস চলছে। ভোটে বুথ দখল হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘শেষ দিনের প্রচারে রেল মাফিয়া রামবাবুকে প্রচারে নামতে দেখা গিয়েছে। এই সন্ত্রাস রুখতে প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে গণতন্ত্রের মৃত্যু হবে। কিন্তু মানুষ এর জবাব দেবে। আর প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে বিজেপি ১৯টি আসনে জয়ী হব।”
শুধু পদযাত্রা নয়, বামেরা অবশ্য অলিগলিতে মাইকের মাধ্যমে প্রচারেই গুরুত্ব দিয়েছে। কয়েকটি এলাকায় বামেদের পথসভা ও মিছিলও হয়। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআই প্রার্থী প্রশান্ত দাসের সমর্থনে বিশাল মিছিল এলাকা পরিক্রমা করে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও সিপিএমের পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রচার শেষে খড়্গপুরে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে ধারণা সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের। এ দিন তিনি বলেন, “প্রচার শেষে আমাদের যা মূল্যায়ন তাতে কোনও দল একা বোর্ড গঠন করতে পারবে না। অবাধ নির্বাচন হলে আমাদের আসন বেড়ে ১০-১১টি হবে বলে আশা করছি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভোটের আগেই বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের পক্ষে বুথ দখল করতে শহরে এসে গিয়েছে।”
যদিও বিরোধীদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষেই এ দিন সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে শাসকদল তৃণমূলকে। এ দিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বর্ণাঢ্য পদযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রিঙ্কিদাস ঘোষের সমর্থনে ঢাক-তাসার তালে রণপা নৃত্যে অভিনব প্রচার দেখা গিয়েছে। শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলের মিছিল বের হয়। শহরের সুভাষপল্লিতে এক পথসভায় যোগ দেন শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী। প্রচার শেষে দেবাশিসবাবু বলেন, “কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএম জোটবদ্ধ হয়ে একটা গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।’’ তাঁর দাবি, তাঁরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই জিতবেন। তাই মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন।’’
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy