Advertisement
২৫ মে ২০২৪
জামিনে মুক্ত অভিযুক্ত

ক্ষতিপূরণে ক্ষত সারবে তো, প্রশ্ন অ্যাসিডে জখম অর্চনার

মুখের ডান দিক থেকে গলা পর্যন্ত ঝুলে গিয়েছে মাংস। এখন আর গলা বলতে কিছু নেই। ডান হাত আটকে আছে ডান গালের সঙ্গে, এক টুকরো মাংসের টানে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে ডান চোখটি।

ঝলসে গিয়েছে মুখ।  নিজস্ব চিত্র।

ঝলসে গিয়েছে মুখ। নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত গুহ
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৬
Share: Save:

মুখের ডান দিক থেকে গলা পর্যন্ত ঝুলে গিয়েছে মাংস। এখন আর গলা বলতে কিছু নেই। ডান হাত আটকে আছে ডান গালের সঙ্গে, এক টুকরো মাংসের টানে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে ডান চোখটি। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁ চোখও। শনিবার কাঁথি মহকুমা আদালতে এসে অর্চনা মণ্ডল শুনেছেন তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন। গুনে গুনে তিন লক্ষ টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করে দেবে রাজ্য সরকার। ‘‘তাতে কী হবে? আমার যা ক্ষতি হয়েছে, তা সারবে? চোখটা ফিরবে? শাস্তি হবে লোকটার?’’ প্রতিক্রিয়া অর্চনাদেবীর।

২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। সকাল ৬টা নাগাদ খেজুরির পানখাই গ্রামে বাড়ির পুকুর ঘাটে বাসন মাজছিলেন তিনি। অভিযোগ, প্রতিবেশী লক্ষ্মণ পাত্র সেখানে তাঁকে কু-প্রস্তাব দেন। রাজি হননি অর্চনাদেবী। প্রথমবার নয়। এর আগেও বহুবার লক্ষ্মণের প্রস্তাব ফিরিয়েছেন অর্চনা। ‘অপরাধ’ বড় কম নয়, তাই তৈরি হয়েই এসেছিলেন লক্ষ্মণ। এক গ্লাস অ্যাসিড ছুঁড়ে দিয়েই পালান তিনি। গলে পড়া মাংসের যন্ত্রণা নিয়ে অর্চনাদেবীকে ছুটতে হয় কামারদা হাসপাতাল থেকে জেলা হাসপাতাল। তারপর কলকাতা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। বাঁচানো যায়নি ডান চোখটি। লক্ষ্মণ গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনও পেয়ে যান বেমালুম। ঘটনার আট বছর পরেও ওই মামলা বিচারাধীন কাঁথি আদালতে। ঘুরে
বেড়াচ্ছেন লক্ষ্মণ।

সম্প্রতি রাজ্য সরকার ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ভিক্টিম কম্পেনসেশন স্কিম-২০১২’ অনুসারে ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনলক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে অর্চনাদেবীর মামলায়। কাঁথি মহকুমা আইনি পরিষেবা কমিটির পক্ষ থেকে রাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হয়। আবেদন গৃহীত হয়েছে। কাঁথি মহকুমা আইনি পরিষেবা কমিটির সভাপতি ও কাঁথির অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সুকুমার রায় জানান, কাঁথি আদালতে এই প্রথম অ্যাসিড আক্রান্তের বিচার মামলায় কোনও মহিলাকে রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। অর্চনাদেবীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ প্রয়োজনীয় নথি শনিবারই আদালতে জমা দেন তাঁর আইনজীবী আশিস দেবনাথ।

অর্চনাদেবীর স্বামী গোকুল মণ্ডল রিকশা চালান, কখনও ইট ভাটায় কাজ করেন। অভাবের সংসারে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন সম্প্রতি। বড় ছেলে কাজের সূত্রে বাইরে। ছোট ছেলেটি নবম শ্রেণি— আট বছরে থমকে নেই সংসার। তবু থমকে আছে সময়, অর্চনার মুখের উপর। তাঁর দিদি বন্দনা দাস এ দিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘তিন লক্ষ টাকায় কী হবে জানি না। তবু চেষ্টা করছি যাতে বোনের মুখটা অন্তত ঠিক করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE