E-Paper

জীবিতকে মৃত দেখিয়ে জমি হাতানোর নালিশ

বিষয়টি জানতে পেরে কেশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কেশপুরের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নীহাররঞ্জন মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১০
তিনি ‘মৃত’ নন। প্রমাণে মরিয়া তাজ! নিজস্ব চিত্র

তিনি ‘মৃত’ নন। প্রমাণে মরিয়া তাজ! নিজস্ব চিত্র

জীবিতকে মৃত দেখিয়ে জমি হস্তান্তর হয়েছে। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের। অভিযোগ, তাজ মহম্মদ নামে এক ব্যক্তিকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে। তাজ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র ব্লক সভাপতি। তাঁর নামে থাকা জমি হস্তান্তর হয়েছে তামান্না খাতুন নামে এক মহিলার নামে। তামান্না তৃণমূলের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তাঁর স্বামী শেখ আসাদুল হক তৃণমূলের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে আসাদুলের।

অভিযোগ, তাজ ‘মৃত’, এমন শংসাপত্র দিয়েছেন কেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান চন্দনা ভুঁইয়া। শংসাপত্রে তাঁর দাবি, ‘মৃত তাজ মহম্মদ সমস্ত বিষয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে নিম্নলিখিত একমাত্র কন্যাকে (তামান্না) রাখিয়া গিয়েছেন। এ ছাড়া আর উত্তরাধিকার নেই।’ তাজের দাবি, তাঁর সঙ্গে ওই মহিলার কোনও সম্পর্কই নেই। ওই শংসাপত্রের ভিত্তিতেই জমিটি হস্তান্তর হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে কেশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কেশপুরের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নীহাররঞ্জন মণ্ডল। নীহাররঞ্জন মানছেন, ‘‘প্রধানের শংসাপত্র নিয়ে একটা গন্ডগোলের জেরে একটা সমস্যা হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।’’

কী ভাবে একটা শংসাপত্রের ভিত্তিতে জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে গেল, বাদ বাকি দিক যাচাই না করেই, প্রশ্ন উঠছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সুমনসৌরভ মহান্তি বলেন, ‘‘কেশপুরের ওই জমি হস্তান্তরের বিষয়টি শুনেছি। কী ভাবে, কী হয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘কেশপুরের ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

সবমিলিয়ে ০.১১ একর জমি হস্তান্তর হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তিনি যে বেঁচে আছেন, তা প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইএনটিটিইউসি- র ব্লক সভাপতি তাজ। পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধান তাঁকে ‘মৃত’ হিসেবে দেখানোয় বিস্মিত তৃণমূলের এই শ্রমিক নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জীবিত। অথচ, আমাকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে শুনেছি। আমার নামে থাকা জমিও অন্যের নামে হস্তান্তর হয়েছে।’’ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন না? তাজ বলেন, ‘‘ইতি মধ্যে ভূমি দফতরের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে শুনেছি। দলের মধ্যে আলোচনা করে নিই! তারপরে আমিও অভিযোগ জানাব।’’ তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজা অবশ্য জানাচ্ছেন, ‘‘একটা নথির গেরোয় ওই জমি হস্তান্তরের বিষয়টি শুনেছি। ওঁকে (তাজকে) পুলিশে অভিযোগ জানানোর কথা বলা হয়েছে। যে বা যারা দোষী, শাস্তি হোক। দল কাউকে আড়াল করবে না।’’

নিয়মানুযায়ী, শুধুমাত্র কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর শংসাপত্রের কিংবা উত্তরাধিকারের শংসাপত্রের ভিত্তিতে তাঁর জমি অন্যের নামে হস্তান্তর করা যায় না। যাঁর নামে জমি হস্তান্তর করা হচ্ছে, মৃতের সঙ্গে তাঁর রক্তের সম্পর্ক থাকা জরুরি। সেই সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণও দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমত তাজ জীবিত। দ্বিতীয়ত তাঁর সঙ্গে ওই মহিলার কোনও সম্পর্কই নেই। সবদিক যাচাই না করেই কী ভাবে জমিটি হস্তান্তর করা হল, প্রশ্ন উঠছে।

কেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান চন্দনা ভুঁইয়ার দাবি, ‘‘ওই শংসাপত্র সম্পূর্ণ জাল। আমি এমন কোনও শংসাপত্রে সই করিনি।’’ যাঁর নামে জমিটি হস্তান্তর হয়েছে, সেই তামান্না খাতুনের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তামান্নার স্বামী আসাদুলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর মোবাইল বন্ধ রয়েছে। সবদিক যাচাই ছাড়াই জমি হস্তান্তর কী ভাবে? কেশপুরের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের সাফাই, ‘‘আরও খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। ভুল সংশোধন করা হবে!’’ জেলার এক ভূমি কর্তার আশ্বাস, ‘‘ কারও বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Keshpur TMC Panchayat Head

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy