সৈকতে এভাবেই চলে অবাধে মদ্যপান। নিজস্ব চিত্র
বিস্তৃত সৈকতে আছ়ড়ে পড়ছে ঢেউ। জলের মধ্যে বসে সেই ঢেউয়ের আমেজ নিতে নিতেই মদের বোতলে চুমুক দিচ্ছেন কয়েকজন পর্যটক।
দৃশ্যটি তাজপুরের। কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়, স্থানীয়দের দাবি, এমন ঘটনা পর্যটনের মরসুমে হামেশাই দেখা যায়। অভিযোগ, নজরদারির অভাবেই সৈকতে এমন ‘সাহসী’ হয়ে উঠেন পর্যটকেরা। অভিযোগ কার্যত মেনেও নিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, তাজপুরে সারা বছর দিঘা বা মন্দারমণির মতো জমজমাটি ভিড় হয়তো দেখা যায় না, কিন্তু বহু পর্যটকেই নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর জন্য এখানে আসেন। অভিযোগ, পর্যটকদের তেমন ভিড় না হওয়ার কারণেই নিরাপত্তার ব্যাপারে ‘অবহেলিত’ হয়ে রয়েছে এই সৈকত।
স্থানীয় এক হোটেল মালিক বলেন, ‘‘গরমের ছুটি পড়লে এখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। কখনও কখনও দিন তিনেকের ছুটি থাকলেই অনেকে দিঘা না গিয়ে তাজপুর চলে আসেন। কারণ, দিঘার মতো পুলিশের কড়া নজরদারি এখানে নেই। পর্যটকেরা স্বাধীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে পারেন।’’
পুরুলিয়া থেকে বেড়াতে এসেছেন তিন বন্ধু। তাঁদের সাফ কথা, ‘‘আমরা দিঘা বা মন্দারমণিতে যাই না। ওগুলোতে বড্ড বেশি ভিড়। তার চেয়ে তাজপুর অনেক ভাল। এখানে পুলিশের কড়াকড়ি যেমন নেই, তেমনি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ারও কেউ নেই। ছুটি এসে যদি মজাই না করতে পারলাম, তাহলে সমুদ্রে বেড়াতে এসে কি লাভ?’’
তবে পুলিশি নজরদারি কি একেবারেই নেই? উত্তরে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যে পুলিশ এসে টহল দিয়ে চলে যায়। অধিকাংশ সময় পুলিশ বা নুলিয়া— কেউই থাকে না। এখানে এখনও পর্যন্ত পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসেনি। কিন্তু তা বলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে না, তা ঠিক নয়।’’
সৈকতে মাছ ভাজার দোকানে মদ বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। সপরিবারে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বেড়াতে এসেছেন নীতিন মালাকার। তাঁর কথায়, ‘‘তাজপুরে এসে দেখছি এখানে পরিবার নিয়ে আসা নিরাপদ নয়। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এই ভাবে সমুদ্রের ধারে বসে মাছ ভাজা দিয়ে নেশা করা কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ আর এক পর্যটকের অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় কেউ জলে যেমন ডুবে যেতে পারেন, তেমন অন্য পর্যটকদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করতে পারেন। আর সৈকত সংলগ্ন এলাকায় আলোর ব্যবস্থাও নেই।
এ ব্যাপারে মন্দারমণি থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত লোকের অভাব রয়েছে। মন্দারমণি থানার পক্ষে এতবড় এলাকার দায়িত্ব সামলানো মুশকিল। তবে বেশ কিছু পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা দূরবীন দিয়ে নজর রাখেন।’’ কিন্তু তাতেও যে পর্যটকদের বেপরোয়া গতিবিধি আটকানো যাচ্ছে না তা মানছে পুলিশ।
মাছ ভাজার দোকানে মদ বিক্রি প্রসঙ্গ পুলিশের বক্তব্য, তাঁদের অভিযানের সময় এ ধরনের কোনও দোকান চোখে পড়েনি।
তাজপুরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক ও দিঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের পরিচালন কমিটির সদস্য অখিল গিরি বলেন, ‘‘তাজপুরে পর্যটকদের নিরাপত্তা কম, এমনটা নয়। এখানে দিঘার চেয়ে পর্যটকের সংখ্যা কম। তাই কম সংখ্যক নুলিয়া থাকে। এখানে ডুবে যাওয়ার ঘটনাও তেমন ঘটে না। তা ছাড়া এখানে এখনও উন্নয়নের কাজ চলছে।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy