Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

আন্দোলনের সমর্থক শিক্ষকের বাড়ির নথি তলব

যদিও কাঁথি পুরসভার তরফে কোনওরকম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, একা বসন্ত নন, পুরসভার ২১ টি ওয়ার্ড জুড়ে এ রকম বহু বাড়ির বৈধ অনুমোদনপত্র দেখতে চাওয়া হচ্ছে।

কাঁথি পুরসভা।

কাঁথি পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

কেশব মান্না
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৮
Share: Save:

আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। তার ঠিক পরেই সেই প্রধানশিক্ষকের থেকে তাঁর বাড়ির কাগজপত্র চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি পুরসভা। যা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করার ‘শাস্তি’ হিসাবে প্রশাসনের তরফে তাঁকে বিভিন্ন অছিলায় হেনস্থা করা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার জেরে তৃণমূল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে রাজনৈতিক তরজাও ক্রমশ বাড়ছে।

কাঁথি-১ ব্লকের নয়াপুট সুধীর কুমার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্ত কুমার ঘোড়ইকে বৃহস্পতিবার নোটিস পাঠায় কাঁথি পুরসভা। তাঁর কাছে বাড়ির অনুমোদন পত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যাবতীয় নথি পুরসভার কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। পুরসভা এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথি পুরসভা এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বসন্ত। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রানি ঘোড়ই কাঁথি শহরের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। ২০০০ সালে স্বামী-স্ত্রী মিলে চার ডেসিমেল জায়গা কিনেছিলেন। সেখানে তাঁরা দোতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন।

স্বপ্না বলেন, ‘‘পুরসভার কাছ থেকে বাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। পুরসভাকে প্রতি বছর পুরকর দিয়ে আসছি। তারপর সেই নথি একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে জমা রেখে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। যার টাকা এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয়নি।" বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত বসন্ত। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার নয়াপুট সুধীর কুমার হাইস্কুল তিনি অত্যন্ত প্রশংসিত এবং ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক হিসাবেও পরিচিত।

পুরসভা এলাকায় জমি এবং বাড়ির বৈধ কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর পুরকর নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট পুরসভা. দীর্ঘ দুই দশক পুরকর দেওয়ার পর কী কারণে ঠিক এই সময়েই ওই প্রধান শিক্ষককে বাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো হল, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এ ব্যাপারে নয়াপুট সুধীরকুমার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন,"চলতি সপ্তাহে পরপর দু’ বার সমাজমাধ্যমে আমি আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তাতেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমার বাড়ির কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। এটা চূড়ান্ত অপমানজনক।"

যদিও কাঁথি পুরসভার তরফে কোনওরকম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, একা বসন্ত নন, পুরসভার ২১ টি ওয়ার্ড জুড়ে এ রকম বহু বাড়ির বৈধ অনুমোদনপত্র দেখতে চাওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিরঞ্জন মান্না বলেন, "শুধু ওই প্রধান শিক্ষক নন, গোটা শহরে প্রায় চারশোর কাছাকাছি বাড়ির মালিকের কাছে বৈধ নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।" যদিও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রধান শিক্ষক সমিতির রাজ্য কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রীতিরঞ্জন মাইতি বলছেন,"প্রতিহিংসা না করাই ভাল।"

পুরসভার এই বক্তব্যের পেছনে আলাদা রাজনীতি দেখছে গেরুয়া শিবির। তাদের আশঙ্কা, পুজোর আগেই কাঁথি শহরে বাড়ির পুরকর বাড়াতে চাইছে পুরসভা। ইতিমধ্যে বহু পাকা বাড়িতে পুরকর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ানো হয়েছে।

স্থানীয় বিধায়ক তথা পুরসভার পুরপ্রতিনিধি অরূপ কুমার দাসের কথায়, "তৃণমূলের পদাধিকারীরা পৌর প্রশাসক থাকাকালীন ইচ্ছে মতো অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ করে রাজনৈতিক কুকর্ম করে গিয়েছেন। সেই কুকর্ম আড়াল করার জন্য যাঁরা নিয়মিত পুরকর দিয়ে আসছেন তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।"

অন্য বিষয়গুলি:

Contai Municipality Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE