E-Paper

অসংরক্ষিত পদেও জনজাতি সভাধিপতি

বছর বিয়াল্লিশের চিন্ময়ী সাঁওতালি সাহিত্যজগতে বহু চর্চিত নাম। তাঁর জন্মস্থান ওড়িশার রায়রংপুর। বিবাহসূত্রে থাকেন ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া কন্যাডোবায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৪
শপথ নেওয়ার পরে মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার সঙ্গে সভাধিপতি চিন্ময়ী মারান্ডি (বাঁ দিকে) ও সহ-সভাধিপতি অঞ্জলি দলাই। বুধবার ঝাড়গ্রামে।

শপথ নেওয়ার পরে মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার সঙ্গে সভাধিপতি চিন্ময়ী মারান্ডি (বাঁ দিকে) ও সহ-সভাধিপতি অঞ্জলি দলাই। বুধবার ঝাড়গ্রামে।  নিজস্ব চিত্র।

জল্পনায় ছিল একাধিক নাম। শেষ পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি হলেন চিন্ময়ী মারান্ডি। জল্পনা, ভোটঅঙ্কের হিসেব নিকেশেই চিন্ময়ীকে সভাধিপতি করা হয়েছে। সহকারী সভাধিপতি হয়েছেন অঞ্জলি রায় দলাই।

ঝাড়গ্রাম ব্লক থেকে জেলা পরিষদের ৯ নম্বর আসনে জিতেছেন চিন্ময়ী। তবে জেলা সভাধিপতি পদটি এ বার অসংরক্ষিত ছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই শীর্ষ নেতৃত্ব জনজাতির প্রতিনিধি চিন্ময়ীকে সভাধিপতি পদে বেছেছেন। সহ-সভাধিপতি পদটি তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত ছিল। সাঁকরাইল ব্লক থেকে জেলা পরিষদের ১০ নম্বর আসনে জয়ী অঞ্জলিকে সেই পদ দেওয়া হয়েছে।এ বার দলের ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে অঞ্জলিই সব থেকে বড় ব্যবধানে জিতেছেন।

বছর বিয়াল্লিশের চিন্ময়ী সাঁওতালি সাহিত্যজগতে বহু চর্চিত নাম। তাঁর জন্মস্থান ওড়িশার রায়রংপুর। বিবাহসূত্রে থাকেন ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া কন্যাডোবায়। ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীও রায়রংপুরেরই কন্যা। দৌপদীর সঙ্গে চিন্ময়ীর ব্যক্তিগত স্তরে আলাপও রয়েছে। চিন্ময়ীর রাজনৈতিক জীবন শুরু ২০১৮ সালে। সে বছর ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন চিন্ময়ী। পঞ্চায়েত সমিতির দলনেত্রীও ছিলেন। এ বার জেলা পরিষদে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর ভূমিকার কথা শোনা যায়। তবে কুড়মি আন্দোলনের আবহে চিন্ময়ীর জয় নিয়ে সংশয় ছিল। মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, শহর তৃণমূলের সভাপতি নবু গোয়ালা, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো, পুরপ্রধান কবিতা ঘোষরা চিন্ময়ীর হয়ে প্রচারও করেছিলেন।

জানা যাচ্ছে, সভাধিপতি বাছাইয়ে চিন্ময়ীর নাম গোড়ায় আলোচনায় ছিল না। মন্ত্রী বিরবাহার ঘনিষ্ঠ লালগড় থেকে জয়ী অতসী সিনহার নাম শোনা যাচ্ছিল। সাঁকরাইল থেকে জয়ী কমলকান্ত রাউত, নয়াগ্রামে জয়ী টিম অভিষেকের জেলা নেতা সুমন সাহু, নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি সঞ্চিতা ঘোষ, বেলপাহাড়ি থেকে জয়ী বিরবাহা সরেন টুডু, ঝাড়গ্রাম ব্লকের ৮ নম্বর আসনে জয়ী কমল মাহাতোর নামও দৌড়ে ছিল। আই প্যাক ও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রতিটি নাম নিয়ে ময়নাতদন্ত করে জেলা সভাপতিকে সুনির্দিষ্ট নাম প্রস্তাব করতে বলে। সূত্রের খবর, এরপরই চিন্ময়ীর নাম জেলা থেকে পাঠানো হয়। তাতে সিলমোহর দেন শীর্ষ নেতৃত্ব। কলা বিভাগের স্নাতক চিন্ময়ী বর্তমানে ভুবনেশ্বরে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি সাঁওতালি, বাংলা, ওড়িয়া, হিন্দি ও ইরেজিতে কথা বলতে পারেন। সাঁওতালিতে তাঁর চারটি কবিতার বই রয়েছে। ভাল গাড়িও চালাতে পারেন চিন্ময়ী। এ বার নিজেই গাড়ি চালিয়ে ভোটের প্রচার সেরেছেন।

মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসে লোধাশুলিতে জেলা পরিষদের বিজয়ী ১৯ জন সদস্যকে আলোচনায় ডেকেছিলেন জেলা সভাপতি দুলাল। তিনি জানিয়ে দেন, সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি পদে শীর্ষ নেতৃত্ব যাঁদের নাম পাঠাবেন সর্বসম্মত ভাবে তা মেনে নিতে হবে। তবে সভাধিপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা ছিল বুধবার পর্যন্ত। এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ দলের জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে ১৯ জনকে নিয়ে মিছিল শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন জেলা সভাপতি দুলাল, মন্ত্রী বিরবাহা, জেলা সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী প্রমুখ। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে দুলাল শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।

১৯ জনকে শপথবাক্য পাঠ করান অতিরিক্ত জেলা শাসক (জেলা পরিষদ) অবনীত পুনিয়া। এরপর সভাধিপতি পদে চিন্ময়ীর নাম প্রস্তাব করেন বিরবাহা সরেন টুডু। প্রস্তাব সমর্থন করেন কমলকান্ত। সহ-সভাধিপতি পদে অঞ্জলির নাম প্রস্তাব করেন সঞ্চিতা। প্রস্তাব সমর্থন করেন কমল মাহাতো। সর্বসম্মতিক্রমেই সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি নির্বাচন হয়। পরে শুরু হয় সবুজ আবির খেলা। ফের মিছিলও হয়। চিন্ময়ী ও অঞ্জলি বলছেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকার মানুষের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন-কাজ হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy