রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া। বুথস্তরে সেই কাজের মূল দায়িত্ব বুথ লেভেল অফিসারদে (বিএলও) কাঁধে। অথচ বিএলওদের নিরপেক্ষতা নিয়েই বারবার উঠছে প্রশ্ন। এ বার দেখা গেল তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিও বিএলও হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
খড়্গপুর-২ ব্লকের এই ঘটনায় বিতর্ক বেধেছে। পিংলা বিধানসভার অন্তর্গত এই ব্লকেরই বাসিন্দা তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বিধায়ক অজিত মাইতি। সেখানকার বিএলও অসিতকুমার দে চকমকরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি। তাঁকেই ওই পঞ্চায়েতেরই ওয়ারদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৭ নম্বর বুথে বিএলও করা হয়েছে। অসিত নিজে ওয়ারদা বুথেরই বাসিন্দা। আর পেশায় ব্লকের তেঁতুলমুড়ি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সম্প্রসারক বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক। সেই সূত্রেই তাঁকে বিএলও করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর।
অথচ, কমিশনের নির্দেশিকা বলছে, রাজনৈতিক সংযোগ রয়েছে এমন কাউকে বিএলও করা যাবেনা। এ প্রসঙ্গে খড়্গপুর ২-এর বিডিও সুব্রত ঘোষ বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি। নির্বাচন কমিশনের যে তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে, তার মধ্যেই উনি পড়ছেন। এর পরে জেলা যে পরামর্শ দেবে, সেই মতো পদক্ষেপ করব।”
এর আগে খড়্গপুর শহরে তৃণমূলের রাজনৈতিক সভায় আটজন বিএলওর উপস্থিতি ঘিরে বিতর্ক বেধেছিল। ওই বিএলওদের বিরুদ্ধে এখনও জোরালো পদক্ষেপ হয়নি। এ বার খোদ তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি বিএলও হওয়ায় সরব বিরোধীরা। বিজেপির পিংলা ২ নম্বর মণ্ডল সভাপতি সুমন ঘোড়ই বলেন, “একজন বিএলও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হলে কী ভাবে এসআইআরের কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা সম্ভব! আগামী তিন দিনের মধ্যে এই বিএলও পরিবর্তন না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।”
আগে নিজের মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের এলাকা তেঁতুলমুড়ি বুথে বিএলও হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অসিতকুমারের। তবে এ বার একেবারে নিজের রাজনৈতিক অঞ্চল ও বুথেই এসআইআরের কাজ করবেন তিনি। অসিতকুমার বলেন, “আমি ২০০৩ সাল থেকে বিএলওর কাজ করি। সেরা বিএলও পুরস্কারও পেয়েছি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আমি তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ঠিকই। কিন্তু বহু বিএলও তো বিজেপিতেও যুক্ত আছে।” এ ক্ষেত্রে ত্রুটি দেখছেন না তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতিও। তিনি বলেন, “উনি একজন পার্শ্বশিক্ষক। আর শিক্ষকদের রাজনীতি করার অধিকার আছে। আসলে আমরা যখন এসআইআর নিয়ে বুথগুলিতে রীতিমতো সমীক্ষা শুরু করেছি, তখন বিজেপি একটা ছিদ্র অন্বেষণ করে অভিযোগ করছে। আসলে ওরা প্রচারে থাকতে চায়, আমরা মাঠে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)