Advertisement
E-Paper

উল্টো রথে উল্টো দিশায় মন্দির সংস্কার

একদিকে লোকগাথা আর একদিকে সংস্কারের ছোঁয়ায় নতুন হয়ে ওঠা মন্দির— তারই মাঝখানে রথের রশিতে টান। বাসিন্দাদের উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু যে ভাবে প্রাচীন মন্দিরের গায়ে প্লাস্টার ও সাদা রং করে দেওয়া হয়েছে, তাতে ইতিহাস গবেষকদের ক্ষোভের শেষ নেই।

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ১৩:১০
আগে-পরে: বাঁ দিকে পুরনো জগন্নাথ মন্দির। ফাইল চিত্র।

আগে-পরে: বাঁ দিকে পুরনো জগন্নাথ মন্দির। ফাইল চিত্র।

জনশ্রুতিতে ভেসে আসে কুষাণ, গুপ্ত, পাল বংশের কত কথা, পোড়ামাটির ফাঁক-ফোকরে। সমুদ্র নাকি আছড়ে পড়ত পুরনো মন্দিরটির ঠিক সামনে।

সেই জগন্নাথ মন্দির—পূর্ব মেদিনীপুরের বাহিরী এলাকার ঐতিহ্য। সে মন্দিরকে ঘিরে সার্কিট ট্যুরিজমের পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। রথের আগে মে মাসে ৭৪ লক্ষ ৬২৩ হাজার টাকা খরচ করে সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে মূল মন্দির ও জগমোহনের। তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

একদিকে লোকগাথা আর একদিকে সংস্কারের ছোঁয়ায় নতুন হয়ে ওঠা মন্দির— তারই মাঝখানে রথের রশিতে টান। বাসিন্দাদের উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু যে ভাবে প্রাচীন মন্দিরের গায়ে প্লাস্টার ও সাদা রং করে দেওয়া হয়েছে, তাতে ইতিহাস গবেষকদের ক্ষোভের শেষ নেই। কাঁথির ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অনুকূল পড়্যা থাকেন বাহিরীতেই। তিনি জানাচ্ছেন, টেরাকোটা মন্দিরে কোনও নক্শা করা না থাকলেও পোড়ামাটির রঙের একটা ঐতিহ্য ছিল। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মন্দিরের গায়ের রং বদলে যাওয়ায় অস্বস্তি হচ্ছে।’’

ডানদিকে সং‌স্কারের পরের চেহারা। নিজস্ব চিত্র

মন্দিরটি খুব সম্ভবত সতেরোশো শতকের। সংস্কারে মূল মন্দিরের গঠনগত কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। ৫০ ফুট লম্বা ও ২৪ ফুট চওড়া মূল মন্দির আর জগমোহনের উচ্চতা ৪০ ফুট ও চওড়া ২০ ফুট। চূড়া থেকে নেমে আসা শ্যাওলার স্তর এখন আর নেই। উপড়ে ফেলা হয়েছে মন্দিরের গায়ে বেড়ে ওঠা বট অশ্বত্থের চারাও। আশপাশের আগাছা সাফ করে সাজানো হয়েছে মন্দির চত্বর। সংস্কার করা হয়েছে মন্দিরের সংলগ্ন তিনটি পুকুর— ভীমসাগর, লোহিতসাগর ও হিমসাগরের। গোটা এলাকাটি ঘিরে বিনোদন পার্ক গড়ে পর্যটনকেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতি। সে সব কিছুকেই স্বাগত জানাচ্ছেন বাসিন্দারা।

কিন্তু কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও ইতিহাসবিদ প্রেমানন্দ প্রধান বলেন, ‘‘সংস্কারের ফলে জগন্নাথ মন্দিরের বাহ্যিক চরিত্র অনেকখানি বিঘ্নিত হয়েছে। মন্দির টিঁকিয়ে রাখার জন্য সংস্কার জরুরি ছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক রূপকে যতটা সম্ভব অপরিবর্তিত রেখে সংস্কার করলে ভাল হত। আগামী প্রজন্ম জানতেই পারবে না মন্দিরের আসল রূপ কেমন ছিল। ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে এই পরিবর্তনে খুশি নই।’’

বাহিরী মন্দিরকে ঘিরে নানা লোকগাথা প্রচলিত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রাজদুলাল নন্দ বলেন, “জনশ্রুতিতে শুনেছি পুরীর আগে এখানেই মন্দির গড়তে এসেছিলেন দেব বিশ্বকর্মা। একরাতের মধ্যে মন্দির গড়ার শর্ত ছিল। কিন্তু ভোর রাতে কাক ডেকে ওঠায় চলে যান তিনি।’’ পুরী চলে যান তিনি।

গত ৫৫ বছর ধরে পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ‘জগন্নাথ সেবায়েত সমিতি’। সম্পাদক সুদীপ্ত নন্দ জানান, প্রায় চারশো বছর ধরে বংশ পরম্পরায় তাঁরাই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। মন্দির থেকে এক কিলোমিটার দূরে পাইকবাড়ে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি। এখন তাই রথের মেলায় জমজমাট এলাকা। আজ উল্টো রথে মন্দিরে ফিরবেন তিন দেবদেবী। কিন্তু ইতিহাসের চাকা জমাট বেঁধে গিয়েছে সাদা চাদরের আস্তরণে।

Temple Reformation মন্দির উল্টো রথ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy