Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Suvendu Adhikari

শুভেন্দুর আবাস-পোস্টে বিতর্ক

উদাহরণ হিসাবে শুভেন্দুর পোস্ট করা তালিকায় নাম থাকা গোপীনাথপুরের বাসিন্দা মাধবচন্দ্র কর্মকারের কথা উল্লেখ করছেন।

শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।

গোপাল পাত্র
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩২
Share: Save:

আবাস যোজনার কাজ খতিয়ে দেখতে জেলায় এসেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। পূর্ব মেদিনীপুরে পরিদর্শনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবারই সেই দলকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি, ওই দিনই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ফেসবুকে ভগবানপুরের একটি গ্রামের উপভোক্তা তালিকা প্রকাশ করে দাবি করেছেন, তাতে কী পরিমাণ ‘দুর্নীতি’ করা হয়েছে। এতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। তালিকায় থাকা উপভোক্তাদের নামের উদাহরণ দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করছেন যোগ্যদের ঠাঁই হয়েছে তালিকায়। আবার, অযোগ্য ব্যক্তিদেরও উদাহরণ রয়েছে বলে দাবি বিজেপির।

বৃহষ্পতিবার দুপুরে ভগবানপুর-১ ব্লকের কাজলাগড়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে। ওই সন্ধ্যাতে শুভেন্দু ভগবানপুর-১ ব্লকের গুড়গ্রাম অঞ্চলের ‘অযোগ্য’ উপভোক্তাদের নামের তালিকা সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘ভগবানপুর-১ ব্লকের গুড়গ্রাম পঞ্চায়েতে আবাস যোজনায় বাড়ি প্রাপকের তালিকা বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৮৪ জন অযোগ্যদের একটা আলাদা তালিকা তৈরি করা হয়েছে।... পশ্চিমবঙ্গে ৩৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই তালিকা সঠিক অনুসন্ধান করলে এই সংখ্যা কয়েক লক্ষ পেরোবে। পাকা বাড়ি রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরই আবাস যোজনার বাড়ি বানানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।...’’

মাধবচন্দ্র কর্মকারের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

মাধবচন্দ্র কর্মকারের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

শুভেন্দুর প্রকাশিত ‘অযোগ্য’দের তালিকা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করছে স্থানীয় তৃণমূল। উদাহরণ হিসাবে শুভেন্দুর পোস্ট করা তালিকায় নাম থাকা গোপীনাথপুরের বাসিন্দা মাধবচন্দ্র কর্মকারের কথা উল্লেখ করছেন। তৃণমূলের দাবি, গত বছর বন্যায় বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় পলিথিনের ঝুপড়ি বাড়িতে দুই ছেলে-সহ চারজন থাকেন মাধব। দিনমজুর মাধব ২০১৩ সালে গোপীনাথপুর মধ্যম বুথে তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে তিনি জয়ী হতে পারেনি। এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত মাধবচন্দ্র পাকা বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনি জমা দিয়েছেন। তাঁর নাম শুভন্দুর ‘অযোগ্য’ তালিকায় রয়েছে শুনে মাধবচন্দ্র কর্মকার বলছেন, ‘‘বাঁশের কঞ্চি দেওয়া মাটির বাড়ি বন্যায় ভেঙে যায়। তারপর থেকে পলিথিনের ঝুপড়িতে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে দিন যাপন করছি। আমার পাকা বাড়ি রয়েছে বলে শুভেন্দুবাবু অভিযোগ করছেন। উনি আমাদের বাড়িতে এসে ঘুরে দেখুন।’’ এ ব্যাপারে কাঁথি সাংগঠনিক তৃণমূলের জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দাস বলছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী রাজনৈতিক কারণে গুড়গ্রাম পঞ্চায়েতের মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবাস প্লাসে একটা তালিকা প্রকাশ করে উপভোক্তাদর অযোগ্য দাবি করেছেন। যাঁরা দিনমজুর, ত্রিপলের ঝুপড়িতে থাকেন, তাদের পাকা বাড়ি বলে দেখাচ্ছেন।’’

শুভেন্দুর তালিকায় যে অযোগ্যদেরও নাম রয়েছে, তা প্রমাণ করতে মরিয়া বিজেপিও। তারা উদাহরণ হিসাবে দেখাচ্ছে গোপালপুর গ্রামে রতন সেনকে। রতন ব্লকের গ্রামীণ সম্পদের অস্থায়ী কর্মী। গত বছর বন্যায় মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার বাবা পাকা বাড়ি করেছেন। তার পরেও তাঁর নাম আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে। এ ব্যাপারে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি স্বপন রায় বলেন, ‘‘রতন এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। তৃণমূল করার জন্য পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ওঁর আবাস যোজনা তালিকায় নাম রয়েছে। এভাবেই গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল দুর্নীতি করছে। সেটা বিরোধী দলনেতা জনসমক্ষে এনেছেন।’’

যদিও উপভোক্তা তালিকায় কীভাবে তাঁর নাম রয়েছে, তা জানে না বলে দাবি করছে রতন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাকা বাড়ি থাকায় সমীক্ষা নাম বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। তার পরেও কীভাবে তালিকায় নাম এসেছে আমার জানা নেই। নাম থাকলে বাতিলের জন্য আবেদন করব।’’

তবে যোগ্য কে আর অযোগ্যই বা কে, তা নিয়ে রাজনৈতিক টানা পড়েন চলছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari Bhagbanpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE