এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জঙ্গলমহল-সহ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে অবশেষে ‘তাঁরা’ ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে ‘গিয়েছেন’। কিন্তু তাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না বন দফতরের কর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা ঝাড়খণ্ড থেকে ফের হাতির পালকে এ রাজ্যের দিকে তাড়িয়ে দিতে পারেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাই সীমানা লাগোয়া বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গড়তে চাইছেন তাঁরা। বন দফতরের কর্তাদের দাবি, এর ফলে দলমা থেকে নেমে আসা হাতির পালের উপদ্রব অনেকটা রোখা যাবে।
জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের কাছে ‘তাঁরা’ অর্থাৎ হাতি ঠাকুররা বড়ই দুর্গতির কারণ। সারা বছর মাঠের ফসল তছনছ করে, বাড়িঘর ভেঙে, প্রাণহানি ঘটিয়ে, মানুষ জখম করে দিব্যি জঙ্গলমহলের সিংহভাগ এলাকাকে নিজেদের মুক্তাঞ্চল বানিয়ে ফেলেছে দলমার হাতিরা। সম্প্রতি দু’দফায় দলমার পালের ৬৫টি হাতিকে ঝাড়খণ্ডের সীমানা পার করে দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দু’টি দলে ভাগ হয়ে হাতির দলটি কাঁকড়াঝোর হয়ে ঝাড়খণ্ডে ফিরে যায়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, হাতির পাল দলমায় ফিরতে চাইলেও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারা তাদের তাড়া করে এ রাজ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ।
কয়েক বছর আগেও সাত-আট মাস পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় কাটিয়ে হাতির পাল ফ্রেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ দলমায় ফিরে যেত। তার আগে এক-দু’বার ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম হয়ে ওড়িশাও ঘুরে আসত তারা। কিন্তু দলমায় হাতিদের থাকার উপযোগী পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, নয়াগ্রাম সীমানায় ওড়িশা বন দফতর ব্যারিকেড করে হাতিদের ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। ঝাড়খণ্ডের দিকেও হাতিদের স্বাভাবিক গতিপথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে বারবার। ফলে গত তিন বছর হাতিরা দলমায় ফিরতে পারেনি।
গত বছর জুনে ঝাড়গ্রামে এক প্রশাসনিক বৈঠকে হাতি-সমস্যা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতির হামলায় মৃত্যুর খতিয়ান দেখে বনকর্তাদের বকাঝকাও করেন। তারপর দলমা হাতির বড়সড়ো পালটিকে খেদিয়ে ঝাড়খণ্ডে পাঠিয়ে ঝাড়খণ্ড-কাঁকড়াঝোর সীমানায় অতন্দ্র পাহারা দিতে শুরু করেন বনকর্মীরা। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে স্থানীয় গ্রামবাসীদেরও নজরদারির কাজে নেওয়া হয়। কিন্তু রাতপাহারার দলে আরও লোক নিয়োগের দাবিতে গত বছর অগস্টে বনকর্মী ও হুলাপার্টির লোকজনকে হাতি তাড়াতে বাধা দেন স্থানীদের একাংশ। ফলে ফের দলমার হাতির পাল ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে ফের এ রাজ্যে ঢুকে পড়ে।
গত ছ’মাস কার্যত গোটা জঙ্গলমহল দাপিয়ে বেড়িয়েছে হাতিরা। অভিজ্ঞ বনকর্মীরা বলছেন, পরিযায়ী হাতিরা নিজস্ব গতিপথে গন্তব্যে যেতে চায়, প্রকৃতির নিয়ম মেনে ঘরে ফিরতে চায়। অহেতুক বাধা দিয়ে হাতিদের সময়-ক্যালেন্ডার বিলম্বিত করে দিচ্ছে পড়শি রাজ্যের বনকর্মী ও সেখানকার বাসিন্দারা। তাই এ বার ঝাড়খণ্ড সীমানায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারি শুরু হয়েছে। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার কাঁকড়াঝোর-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গড়ার তোড়জোড় শুরু করেছে বন দফতর। উদ্দেশ্য, যাতে অসময়ে হাতিদের ফের এ রাজ্যে না ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হাতির বড় দলটি ফিরে যাওয়ার পরে কাঁকড়াঝোর নজরদারি শুরু করেছে ৩০ জন হুলাপার্টির সদস্য।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, “৬৫টি হাতির একটি দল ঝাড়খণ্ডে চলে গিয়েছে। অসময়ে হাতিদের ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে। জঙ্গল এলাকায় নজরদারির জন্য গ্রামবাসীর সাহায্য
নেওয়া হবে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, মেদিনীপুর ও রূপনারায়ণ বন বিভাগ এলাকায় আরও গোটা চল্লিশটি হাতি তিনটি দলে ভাগ হয়ে রয়েছে। সেগুলিকেও দলমায় ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy