Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

Covid19 vaccine: টিকায় দুর্ভোগ আর বিভ্রান্তি  

পর্যাপ্ত করোনা প্রতিষেধক নেই। তার উপর প্রথম ডোজ়ের গ্রহীতাদের কে, কবে, কোথায় প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় পাবেন, সে নিয়ে চরম বিভ্রান্তি চলছেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২১ ০৭:৪৪
Share: Save:

মেদিনীপুরের বাসিন্দা, ৬৪ বছরের ছায়া রুইদাসের প্রশ্ন, ‘‘আমি সুগারের রোগী। এ ভাবে রোজ রোজ ঘোরা সম্ভব?’’ প্রতিষেধক না পেয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা, ৮২ বছরের মিনারানি বসুও। তাঁর কথায়, ‘‘বুঝতে পারছি না কবে পাব!’’ টিকাকরণ কেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন। কেউ ভোরে আসছেন, কেউ তারও আগে। তারপর কুপন বিলি। ভাগ্য ভাল থাকলে পাবেন, না হলে নয়! অনেকটা লটারির টিকিট কাটার মতো! কবে, কতজনকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে তা আগে থেকে অনেকেই জানতে পারছেন না।

একে দুই জেলায় পর্যাপ্ত করোনা প্রতিষেধক নেই। তার উপর প্রথম ডোজ়ের গ্রহীতাদের কে, কবে, কোথায় প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় পাবেন, সে নিয়ে চরম বিভ্রান্তি চলছেই। বিশেষ করে যাঁরা প্রথম ডোজে কোভিশিল্ড নিয়েছেন, সমস্যায় পড়ছেন তাঁরাই। কোভ্যাক্সিন যাঁরা নিয়েছেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে তাঁদেরকেও শুনতে হচ্ছে, ‘এখন নেই। পরে আসবেন’। প্রায় দিনই আবার দৈনিক টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা ওঠানামা করছে। কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করা হয়েছে। এর ফলে গ্রহীতাদের একাংশ বুঝতে পারছেন না, দ্বিতীয় ডোজ় নিতে কবে, কোথায় তাঁদের যেতে হবে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘সরকারি নিয়মানুযায়ী কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ় নেওয়ার ৮৪ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া যাবে। প্রথম ডোজ় যেখানে নিয়েছেন, সেখানেই দ্বিতীয় ডোজ় মিলবে। অন্য কোনও কেন্দ্রেও যাওয়া যেতে পারে।’’ কিন্তু ব্যবধান বাড়ার পর প্রথম ডোজ়ের গ্রহীতাদের নতুন করে স্লিপ দেওয়া হচ্ছে না। তাদের মোবাইলে মেসেজও যাচ্ছে না। ফলে, বিভ্রান্তি থাকছেই। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলছেন, ‘‘নিজেকেই ৮৪ দিনের হিসেব করে নিতে হবে কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে।’’

কার্যত লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ। টিকাকরণ কেন্দ্রে আসতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য বক্তব্য, প্রতিটি শহর এবং ব্লকেই একাধিক টিকাকরণ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি রোজ খোলা থাকছে। নিজের গাড়ি, বাইক, সাইকেলে সহজেই সেখানে যাওয়া সম্ভব। কেউ অটো, টোটো ভাড়া করে এলেও পুলিশ আটকাবে না। উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে হবে।

ভোগান্তির ছবিটা অবশ্য রোজই দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজ় নিতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসেছিলেন শহরের রাজাবাজারের ছায়া রুইদাস। ছায়া বলেন, ‘‘তিনদিন ধরে ঘুরছি। দ্বিতীয় ডোজ়টা পাচ্ছি না। দিনে ৫০ জনকে দেওয়া হচ্ছিল এখানে। প্রথমবার যেদিন এসেছিলাম, ৬৫ নম্বরে নাম ছিল। ঘুরে চলে গিয়েছিলাম। পরের দিন এসেও দেখি, ৬১ নম্বরে নাম। পরদিন রাত আড়াইটায় এসে লাইন দিয়েছি। ৩৯ নম্বরে নাম পেয়েছিলাম। হঠাৎই বেলার দিকে বলা হয়েছে, প্রথম ২০ জনের হবে।’’ প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নিতে লাইন দিয়েছিলেন সঞ্জিত মণ্ডলও। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের প্রশ্ন, দিনের বরাদ্দের বাকি ৩০টা ভ্যাকসিন কোথায় গেল? যদি শেষই হয়েছে, তাহলে তো আগে জানানো উচিত ছিল।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, প্রতিটি কেন্দ্রকেই জানানো হয়েছে, কতজনকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তা আগের দিন জানিয়ে দিতে।

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কার্যত লকডাউনে হাসপাতালে মানুষের যাতায়াতে কোনও পরিবর্তন দেখিনি। আর প্রতিষেধক কতজনকে দেওয়া হবে তা আগের দিনই জানিয়ে দেওয়া হয়।’’ তবে সবংয়ের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষ কান্ডার মানছেন, ‘‘আপাতত আমাদের হাতে কোনও প্রতিষেধক নেই। এলে প্রথম ডোজ়ের বিষয়টি ভাবা হবে।’’ গড়বেতা ১-এর বিডিও শেখ ওয়াসিম রেজা বলেন, ‘‘প্রতিষেধক যেমন যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনভাবেই দেওয়া হচ্ছে। ’’

ঝাড়গ্রাম জেলায় ১০টি টিকাকরণ কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতে সাধারণের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ় বন্ধ রয়েছে। প্রতিষেধক না পেয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব মণিকা মজুমদারও। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ এলেই প্রথম ডোজ় দেওয়া শুরু হবে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রায় ২,৬৫,০০০ জনের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া বাকি রয়েছে। এখানেও প্রথম ডোজ় দেওয়া বন্ধ রয়েছে সাধারণের ক্ষেত্রে। দেওয়া হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় ডোজ়। জেলায় কোভিশিল্ডের প্রায় ৪,৫৩,০০০ ডোজ় ও কোভ্যাক্সিনের প্রায় ৬৫,০০০ ডোজ় এসেছে। দু’ক্ষেত্রেই হাতে রয়েছে নামমাত্র। টিকাকরণের গতি স্বাভাবিক থাকলে দৈনিক ২০- ২২ হাজার ডোজ় ব্যবহৃত হয়। রাজ্যের দাবি, প্রয়োজনের তুলনায় তাদের হাতে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক নেই। কেন্দ্র পাঠাচ্ছে না। তাই জেলাকে দেওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, দেশে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক রয়েছে। (তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবমাল্য বাগচী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal COVID19 Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE