E-Paper

রয়েছে বাহিনী, টানা পঠনপাঠন বন্ধ স্কুলে

২ জুলাই সেই স্কুলগুলির দখল নেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই থেকে তারা সেখানেই রয়ে গিয়েছে।  এদিকে সেকেন্ড সামেটিভের সিলেবাস শেষ হয়নি ওই স্কুল গুলিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ০৭:২৪
কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় বন্ধ গোপীবল্লভপুরের পাঁচকাহানিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় বন্ধ গোপীবল্লভপুরের পাঁচকাহানিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। — নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোট পর্ব মিটে গিয়েছে। কিন্তু ভোট গণনার ১৩ দিন পরও ঝাড়গ্রাম জেলার ১০টি স্কুলভবনে রয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেখানে পঠনপাঠন কার্যত বন্ধ। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে সেখানে সেকেন্ড সামেটিভ টেস্ট (দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ণ) শুরু হওয়ার কথা। স্কুল বন্ধ থাকায় নবম ও একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে।

গত ২৬ জুন জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলাশাসকের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার জন্য ওই ১০টি স্কুলভবন নেওয়া হয়। সেগুলি হল সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরি এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের পাঁচকাহানিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের তপসিয়া বিদ্যাসাগর শিক্ষায়তন, নয়াগ্রাম ব্লকের নয়াগ্রাম বাণী বিদ্যাপীঠ, ঝাড়গ্রাম ব্লকের ঢোলকাট পুকুরিয়া প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দির, বিকাশভারতী শিক্ষায়তন, জামবনি ব্লকের দুবড়া আদর্শ বিদ্যামন্দির, বিনপুর-১ ব্লকের দহিজুড়ি বড়চালতা মডেল স্কুল, লালগড় শাঁখাখুল্যা মডেল স্কুল ও বেলপাহাড়ি ব্লকের ভেলাইডিহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

২ জুলাই সেই স্কুলগুলির দখল নেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই থেকে তারা সেখানেই রয়ে গিয়েছে। এদিকে সেকেন্ড সামেটিভের সিলেবাস শেষ হয়নি ওই স্কুল গুলিতে। পড়ুয়ারাও তাই দিশেহারা।গরমের বর্ধিত ছুটির কারণে এবার একটানা স্কুল বন্ধ ছিল। তারপরে এখন এই পরিস্থিতিতে বেজায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। স্কুলগুলির তরফে বার বার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) কাছে দরবার করা হচ্ছে। কিন্তু লাভ হয়নি। ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিকাশ ভারতী শিক্ষায়তনের টিচার ইনচার্জ মণীন্দ্রনাথ মাহাতো বলছেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় নবম শ্রেণির মধ্যশিক্ষা পর্ষদের রেজিস্ট্রেশন ও একাদশ শ্রেণির উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের রেজিস্ট্রেশন শুরু করা যাচ্ছে না। সিলেবাসও শেষ করা গেল না। ২ অগস্ট থেকে সেকেন্ড সামেটিভ শুরু হওয়ার কথা। পড়ুয়াদের বিভিন্ন বেনিফিট (ছাত্রীদের কন্যাশ্রী, তফসিলি ও আদিবাসী পড়ুয়াদের শিক্ষাশ্রী ও বিভিন্ন স্কলারশিপ) দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’

ঝাড়গ্রাম ব্লকেরই ঢোলকাট পুকুরিয়া প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র আচার্য বলেন, ‘‘২ জুলাই স্কুলে বাহিনী ঢুকেছিল। ভোট শেষ হওয়ার পর সেই বাহিনী স্কুল ছাড়লেও, গণনার আগে আর এক কোম্পানি বাহিনী স্কুলে ঢোকে। এলাকার বেশিরভাগ পড়ুয়া আদিবাসী, লোধা ও অনগ্রসর শ্রেণির। তাদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিলও দেওয়া যাচ্ছে না। ৮ অগস্টের মধ্যে সেকেন্ড সামেটিভ টেস্ট সেরে ফেলতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা কোনও মতেই সম্ভব নয়। কারণ সিলেবাস শেষ হয়নি।’’

সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরি এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের চাপে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন। সোমবার ১৪টি ক্লাস ঘরের মধ্যে মাত্র তিনটি তারা ছেড়ে দিয়েছে। সেখানে পালা করে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। টিচার ইনচার্জ মাখন সামন্ত বলছেন, ‘‘স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা ১২০০। তিনটি শ্রেণিকক্ষে সেকশন ভাগ না করে কোনও মতে ক্লাস করানো হচ্ছে। তবে একাদশ-দ্বাদশের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাহিনী স্কুল না ছাড়লে রুটিন অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে সেকেন্ড সামেটিভ নেওয়া সম্ভব নয়।’’ ওই স্কুলের মিড ডে মিলের ডাইনিং হলটিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে। ফলে ৩ জুলাই থেকে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির মিড ডে মিল বন্ধ রয়েছে। জামবনি ব্লকের দুবড়া আদর্শ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র কুইলা বলছেন, ‘‘গরমের অতিরিক্ত দেড় মাসের ছুটির পর জুলাইয়ের গোড়া থেকে ফের স্কুল বন্ধ। অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতর ও জামবনি থানায় ফোন করেও জানতে পারছি না কবে কবে স্কুল খুলতে পারব।’’

এবারের পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলা ছিল মোটের উপরে শান্ত। ভোটের পরেও গোলমাল তেমন হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ওই স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন দ্রুত শুরুর দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। তবে সূত্রের খবর, রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশ এলে বাহিনী ফিরবে। এখনও সেই নির্দেশ আসেনি। ঝাড়গ্রাম জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘স্কুলগুলির সমস্যার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’ স্কুলভবনগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত জেলার নোডাল অফিসার হলেন ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) সব্যসাচী ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ এলেই শীঘ্রই বাহিনী স্কুল থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CRPF Jawan Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy