Advertisement
E-Paper

পানীয় জল চেয়ে পথে, ত্রাণেও ক্ষোভ

পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা চালুর দাবিতে শনিবার কাঁথি শহরের বাইপাস অবরোধ করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০০:৪১
জলের দাবিতে শনিবার কাঁথিতে রাস্তা অবরোধ।  নিজস্ব চিত্র

জলের দাবিতে শনিবার কাঁথিতে রাস্তা অবরোধ। নিজস্ব চিত্র

‘আমপানে’র তাণ্ডবের পরে তিন দিন কেটে গিয়েছে। উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুরের পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে খোঁজখবর পেতে পুরোদস্তুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। আর এর মধ্যেই ক্রমশ তীব্র হচ্ছে ‘আমপান’ পরবর্তী সঙ্কট। কোথাও পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে, তো কোথাও এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না।

পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা চালুর দাবিতে শনিবার কাঁথি শহরের বাইপাস অবরোধ করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি পরিবার। সকালে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে নারকেল গাছের গুড়ি ফেলে চলে অবরোধ। নিত্যানন্দ মাইতি নামে স্থানীয় এক অবরোধকারীর অভিযোগ, ‘‘শহরের বহু বাড়িতেই বিদ্যুৎ এবং পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি পরিবার এই পরিষেবা থেকে এখনও বঞ্চিত। বাধ্য হয়ে পথ অবরোধ করেছি।’’ পরে সেখানে যায় কাঁথি থানার পুলিশ। সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশ্বাস দেন পুলিশ কর্তারা। তারপরেই অবরোধ উঠে যায়।

১১৬ বি জাতীয় সড়কের পাশেই রয়েছে কাঁথি-৩ ব্লকের দইসাই। দইসাই বাসস্ট্যান্ডের দু’দিকে তিনটি নলকূপ রয়েছে। এলাকা কার্যত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় এই তিনটি নলকূপের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা। দিনে মারিশদা, কুসুমপুর, লাউদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার লোকেরা দূরদূরান্ত থেকে সাইকেল চালিয়ে, কেউ রিকশা ভাড়া করে, হেঁটে সেখানে জল নিতে আসছেন। স্থানীয় দুরমুঠ এলাকার লোকেরা রাতে জল নিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার কাকভোরে দইসাই স্ট্যান্ডে জল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুসুমপুর গ্রামের এক বাসিন্দা। কুসুমপুর থেকে দইসাই দূরত্ব কমপক্ষে তিন কিলোমিটার। তাঁর কথায়, ‘‘ঘণ্টা পাঁচেক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দু’টো ড্রাম জল নিতে পেরেছি।’’ ওই এলাকায় স্থায়ী জলাধার বসানোর দাবি করছেন স্থানীয়েরা।

শনিবার কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানা-সহ একটি প্রশাসনিক দল গোটা ব্লকে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে সরেজমিনে গিয়েছিল। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর পর্যন্ত ১৪ হাজার কাঁচা এবং পাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর মিলেছে। এর মধ্যে সাত হাজার বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশপ্রাণের বিডিও মনোজকুমার মল্লিক বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আর্থিক দিক থেকে এখনও চূড়ান্ত পরিমাপ করা যায়নি। যত সময় গড়াচ্ছে ততই বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা থেকে সাধারণ মানুষের ক্ষতির খবর মিলছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ত্রাণ শিবিরগুলিতে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দাদের একাংশ নিজেদের বাড়ি ফিরে গেলেও অনেকে এখনও ফিরতে পারেনি। তাই সরকারিভাবে জেলায় চলা প্রায় ৮০০ ত্রাণ শিবির এখনই বন্ধ করা হচ্ছে না। দেশপ্রাণ ব্লকের উত্তর ডিহিমুকুন্দুপুর গ্রামে কালুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে বুধবার বিকেলে আশ্রয় নিয়েছিলে ১২টি পরিবারের ৭০ জন। শুক্রবার বিকালে চারটি পরিবার বাড়ি ফিরে যান। বাকিরা ফিরতে পারেনি। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল দাস বলেন, ‘‘ঝড়ে ওই সব পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। তাই ত্রাণ শিবিরেই ওদের থাকতে হচ্ছে।’’

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রের খবর, ৭০ হাজার ত্রিপল বিলি করা হচ্ছে। এছাড়া, রান্নার সামগ্রী-সহ ১৭ হাজার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিট দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে রাস্তায় পড়ে থাকার জেরে ত্রাণ সামগ্রী বোঝাই গাড়ি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলা ত্রাণ শিবির আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে না। যথেষ্ট ত্রাণও ব্লক স্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে অনেক জায়গায় যোগাযোগের সমস্যার জন্য পঞ্চায়েত স্তরে পৌঁছনো যাচ্ছে না।’’

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy