Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাজি-বিস্ফোরণে মৃত বেড়ে ২, তল্লাশিতে বম্ব স্কোয়াড, ফেরার বাড়ি মালিক 

শুক্রবার কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের পশ্চিম কুশবনি গ্রামে শশাঙ্কশেখর ভুঁইয়া নামে এক জনের বাড়িতে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

মজুত বাজি উদ্ধার করছে পুলিশ। শনিবার । নিজস্ব চিত্র

মজুত বাজি উদ্ধার করছে পুলিশ। শনিবার । নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

বিস্ফোরণের পরে কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। কিন্তু এখনও গ্রামের বাতাসে ভাসছে বারুদের কটু গন্ধ। আর এই ২৪ ঘণ্টায় ওই বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে দুই।
শুক্রবার কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের পশ্চিম কুশবনি গ্রামে শশাঙ্কশেখর ভুঁইয়া নামে এক জনের বাড়িতে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। স্থানীয় এব পুলিশের প্রাথমিক দাবি, বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে নিষিদ্ধ আতস এবং শব্দবাজি মজুত ছিল। তাতে আগুন লেগেই ওই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তবে ওই বাড়িতে বাজি তৈরির কারখানা ছিল, না কি ব্যবসার কারণে বাজি মজুত করা হতো, সে নিয়ে খানিকটা ধন্দে রয়েছে পুলিশ। শুক্রবারই ওই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন বাড়ির মালিকের ছেলে সৌরভ ভুঁইয়া (২৪)। গুরুতর আহত হয়েছিলেন পাঁচ জন মিস্ত্রি। তাঁরা ওই বাড়িতে কাঠ এবং গ্রিলের কাজ করছিলেন। শনিবার কলকাতার হাসপাতালে সৌরভ দাস (২৮) নামে এক আহতের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দেউলপোতা গ্রামে।
এ দিকে, এ দিন পশ্চিম কুশবনি গ্রামের ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, এখনও বাতাসে রয়েছে বারুদের গন্ধ। এ দিনই গ্রামে শশাঙ্কর ভেঙে যাওয়া বাড়িতে যান সিআইডি’র বম্ব স্কোয়াডের চার সদস্য। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েক বস্তা নিষিদ্ধ শব্দ বাজি, বারুদ, রাংতা এবং বাজি তৈরির নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করেন। তারপর সেগুলি বাঁকিপুট সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গিয়ে নিয়ম মেনে নিষ্ক্রিয় করা হয়। ওই সময় দমকলের একটি ইঞ্জিন বাঁকিপুটে উপস্থিত ছিল।
বিস্ফোরণে শশাঙ্কর বাড়ির একাংশ উড়ে যায়। পাশের কয়েকটি বাড়িও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকী, কয়েক কিলোমিটার দূরেও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। বাজির কারখানা না অন্য কোনও কারণে এত তীব্র বিস্ফোরণ হয়, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিনিধি দলকেও ডাকা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। উল্লেখ্য, শশাঙ্কের বাড়িতে উদ্ধার হওয়া বাজিগুলির বিশাল আকার দেখে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ঘটনার পর থেকেই শশাঙ্ক ‘ফেরার’। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, শশাঙ্ক বাজির ব্যবসাই করতেন। মুকুন্দপুর-সহ নানা জায়গায় মেলার সময় বা হাটবারে তিনি বাজির দোকান দিতেন। তাই ব্যবসার জন্য কেনা বাজি বাড়িতে মজুত রেখেছিলেন। আবার প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছেন, ওই বাড়িতেই ছোটখাটো আতশবাজি বানানোর কাজ হতো। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সঞ্জয় বেরা বলেন, ‘‘শশাঙ্ক তুবড়ির ব্যবসা করতেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে রংবাতি ও ছোট আতশবাজি বানাতেন। ঘটনার দিন তাঁর বাড়িতে গ্রিলের কাজ হচ্ছিল। সেই কাজের জন্য আনা অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেটে যায়। গ্রিল মিস্ত্রির মোটর সাইকেলটিতেও বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে এত বড় বিস্ফোরণ হয়।’’
কিন্তু এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, যদি বাজি শুধু মজুতই করা হতো, তা হলে এ দিন ওই বাড়ি থেকে এত বারুদ এবং বাজি তৈরির সরঞ্জাম সিআইডি শনিবার উদ্ধার করলো কীভাবে?
এ দিনও কাঁথি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ফের নমুনা সংগ্রহ করে তারা। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিনিধি দল এসে কী রিপোর্ট দেয়, তার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Contai Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE