Advertisement
E-Paper

অপরাধ বাড়ছে, বাড়ন্ত মহিলা থানা

তরুণী বলে চলেছেন। উল্টোদিকে বসে থাকা পুরুষ পুলিশ আধিকারিক মন দিয়ে শুনছেন। তিনি বললেন, ‘‘তরুণীর কথা বলার সময় থানায় ভিড় ছিল। তিনিও ইতস্তত করছিলেন। সেই সময়ে মহিলা পুলিশ কর্মীও ছিল না।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৯
মহিলা থানা পায়নি ঘাটাল (বাঁ দিকে)। ঝাড়গ্রামে তৈরি হয়েছে মহিলা থানা (ডান দিকে) নিজস্ব চিত্র

মহিলা থানা পায়নি ঘাটাল (বাঁ দিকে)। ঝাড়গ্রামে তৈরি হয়েছে মহিলা থানা (ডান দিকে) নিজস্ব চিত্র

দিন কয়েক আগের ঘটনা। ঘাটাল থানায় গিয়ে এক তরুণী জানালেন, পাড়া তুতো এক কাকা তাঁকে মাঝে মধ্যেই ফোনে অশ্লীল কথা বলছে। রাস্তায় বেরোলে পিছু নিচ্ছে ওই কাকা। একবার হাত ধরে টানাটানিও করেছিল। বাড়িতে জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই তিনি নিজেই থানায় এসেছেন অভিযোগ জানাতে।

তরুণী বলে চলেছেন। উল্টোদিকে বসে থাকা পুরুষ পুলিশ আধিকারিক মন দিয়ে শুনছেন। তিনি বললেন, ‘‘তরুণীর কথা বলার সময় থানায় ভিড় ছিল। তিনিও ইতস্তত করছিলেন। সেই সময়ে মহিলা পুলিশ কর্মীও ছিল না।’’

সম্প্রতি ঘাটালে এক তরুণীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার অভিযোগ উঠেছিল প্রেমিকের বিরুদ্ধে। তদন্তের জন্য ওই তরুণীকে থানায় ডাকা হয়। এমন ঘটনা কেন ঘটল তা জানতে ওই তরুণী বা তদন্তকারী পুলিশ কর্তা দু’তরফেই প্রবল অস্বস্তি কাজ করছিল।

ঘাটাল মহকুমার সদর শহর। এখানে কোনও মহিলা থানা নেই। অথচ পুলিশ সূত্রের খবর, থানায় নানা কারণে দায়ের হওয়া মামলার প্রায় অর্ধেক নারীকেন্দ্রিক। গত জানুয়ারি মাসে ঘাটাল থানায় মোট মামলা হয়েছে ৩৬টি। এর মধ্যেই ১৫টি মামলা মহিলা সম্পর্কিত। বধূ নিযার্তন,শ্লীলতাহানি,নাবালিকা অপহরণ সহ নানা বিষয় রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ২০টি মামলার মধ্যে ৭টি মামলা মহিলা সংক্রান্ত। দু’মাসেই অন্য মামলা হয়েছিল সাত-আটটি করে। তার মধ্যেও মহিলাদের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। থানাগুলিতে হাতে গোনা কয়েকজন মহিলা পুলিশ কর্মী আছেন। তাঁরা তদন্তে সহযোগিতাও করেন। কিন্তু ওইটুকুই। আলাদা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পান না ওই মহিলা পুলিশকর্মীরা। পুরুষ পুলিশকর্মীদের মহিলা সহকর্মীদের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয় না।

পশ্চিম মেদিনীপুরে সাকুল্যে ২টি মহিলা থানা রয়েছে। একটি মেদিনীপুরে, অন্যটি খড়্গপুরে। পুলিশের এক সূত্রে খবর, এক সময়ে ঠিক হয়েছিল, মহকুমা সদরে একটি করে মহিলা থানা চালু হবে। সেই মতোই মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে মহিলা থানা হয়। নতুন কোথাও মহিলা থানা চালুর পরিকল্পনা আছে? জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আপাতত নেই।’’

মহিলা থানাগুলোয় আবার লোকাভাব ও পরিকাঠামোগত অভাব রয়েছে। মেদিনীপুরের মহিলা থানায় যেমন সাব- ইন্সপেক্টর রয়েছেন ৪ জন। এঁদের মধ্যে একজন ওসি। ৪ জন এএসআই রয়েছেন ও ২০ জন কনস্টেবল রয়েছেন। মেদিনীপুর, খড়্গপুরে নারী নির্যাতনের যে কোনও মামলা মহিলা থানাতেই হয়। জেলায় মহিলা পুলিশ অফিসার রয়েছেন ২১ জন, মহিলা কনস্টেবল রয়েছেন ৪৬০ জন। যেখানে জেলায় সবমিলিয়ে কনস্টেবল রয়েছেন প্রায় ৪ হাজার। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এত কম পুলিশ নিয়ে কোনও ভাবেই জেলায় বেশি সংখ্যক মহিলা থানা ভালভাবে চালানো সম্ভব নয়।’’ পুলিশের এক সূত্রে খবর, মহিলা থানার ক্ষেত্রে অভিযোগ নেওয়া থেকে শুরু করে তদন্ত, সব কিছুর দায়িত্বে থাকেন মহিলারাই।

ঝাড়গ্রাম জেলায় মহিলা থানা রয়েছে একটি। ঝাড়গ্রাম মহিলা থানা চালু হয় ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ঝাড়গ্রাম থানা চত্বরে আলাদা ভবনে রয়েছে মহিলা থানা। এই থানায় রয়েছেন ৩১ জন মহিলা কনস্টেবল। মহিলা পুলিশকর্মীদের জন্য ব্যারাক তৈরি হয়নি এখনও। রয়েছে পরিকাঠামো গত কিছু সমস্যাও। মূলত ঝাড়গ্রাম থানা এলাকার মহিলা সংক্রান্ত মামলাগুলির তদন্ত করা হলেও ক্ষেত্র বিশেষে নয়াগ্রাম, জামবনি, গোপীবল্লভপুরের কিছু মামলার তদন্তভারও সামলেছেন মহিলা থানার পুলিশকর্মীরা।

(তথ্য: অভিজিৎ চক্রবর্তী, কিংশুক গুপ্ত ও বরুণ দে)

Crime Female Police Station Midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy