Advertisement
E-Paper

সব সময় সঙ্গে ছিলেন জেঠু, স্মৃতিচারণ দেবের

শক্তিপদবাবু সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন। এক সময় কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদের সদস্যও ছিলেন।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২৩
শ্রদ্ধা: জেঠুকে প্রণাম করছেন দেব। বুধবার কেশপুরে। নিজস্ব চিত্র

শ্রদ্ধা: জেঠুকে প্রণাম করছেন দেব। বুধবার কেশপুরে। নিজস্ব চিত্র

জেঠু শক্তিপদ অধিকারীর মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন মঙ্গলবার রাতেই। জেঠুর শেষকৃত্যে যোগ দিতে বুধবার দুপুরে বাবা গুরুপদ অধিকারীর সঙ্গে কেশপুরের মহিষদায় গ্রামের বাড়িতে এলেন সাংসদ তথা অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেব। মহিষদায় টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ির ঘরে বসে জেঠুর স্মৃতিচারণায় ভাসলেন তিনি। বললেন, ‘‘জেঠু বলেছিলেন, সব মানুষই তোকে ভালবাসে। সব দর্শকই তোর। তুই সবাইকে ভালবাসবি।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শক্তিপদবাবু। খবর পেয়ে বুধবার দুপুরেই গ্রামের বাড়িতে আসেন দেব। শক্তিপদবাবুর ছেলে সুজিত অধিকারীর কাছে পরিজনেদের খোঁজখবর নেন। গত লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পরে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। জেঠুর আশীর্বাদ নিতে। দেব বলছিলেন, “জেঠুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরে গতকাল রাতেই সেই দিনের কথাগুলো মনে পড়ছিল। যেদিন আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম, সেদিনই আমার কাছে জেঠুর ফোন এসেছিল। জেঠু বলেছিলেন, তুই দু’লাখেরও বেশি ভোটে জিতবি।”

শক্তিপদবাবু সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন। এক সময় কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদের সদস্যও ছিলেন। দেবের কথায়, “উনি সিপিএমে ছিলেন। তবে উন্নয়নে কখনও রং দেখেননি। জেঠুর সঙ্গে প্রায়ই কথা হত। উনি গাইড করতেন।” তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পরে রাজনৈতিক সৌজন্য থেকেই বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণার বাড়িতে চা খেতে এসেছিলেন দেব। দেব বলছিলেন, “ভোটের আগে একদিন আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর বাড়িতে আমি চা খেতে গিয়েছিলাম। অনেকেই অনেক কিছু বলেছিলেন। তখন জেঠু বলেছিলেন, ভাল করেছিস। এই না হয় অধিকারী বংশের ছেলে।” তৃণমূলের এই অভিনেতা-সাংসদের কথায়, “উনি আমার চেয়ে বেশি রাজনীতি বুঝতেন। আমি অন্য একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আছি। তবে সব সময় আমাকে সমর্থন করতেন। আমি যাতে ভুল পদক্ষেপ না করি সেই দিকটাও দেখতেন।”

দেবের কথায়, “আজকে একটু অন্য রকম লাগবে শুনতে। কিন্তু এটাই সত্যি যে আমরা যখন মুম্বই থেকে আসতাম তখন কেশপুরের সিপিএম পার্টি অফিসে যেতাম। জেঠু ওখানে থাকতেন। জ্যেঠুর বাইকের পিছনে বসে এই বাড়িতে আসতাম। আমার ‘জার্নি’তে জেঠু সব সময় আমার সঙ্গে ছিলেন।” বাবার বিয়ের কথাও উঠে আসে দেবের কথায়। তিনি বলছিলেন, “আমার বাবার বিয়ে জেঠুই দিয়েছেন। বাবাকে না জানিয়ে জেঠু মা-কে দেখতে চলে গিয়েছিলেন বাড়ির সবাইকে নিয়ে।” সাংসদ হওয়ার পরে জেঠুর কোনও আবদার ছিল? দেব বলছিলেন, “আগে গ্রামে ঢোকার রাস্তাটা মোরামের ছিল। জেঠু প্রায়ই বলতেন এই রাস্তাটা নিয়ে। জেঠুর প্রথম আবদারই ছিল, এই রাস্তাটা তোকে পিচের করে দিতে হবে। আমি করে দিয়েছি। পরে বলেছিলেন, রাস্তাটা ভাল হয়েছে।”

বুধবার শক্তিপদবাবুকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতা অলোক আচার্য-সহ শাসক দলের অনেকেই। দেবের কথায়, “রাজনীতির মধ্যে সম্মান বাঁচিয়ে রাখাটা জরুরি। জেঠু তাই করেছেন। এত বছর রাজনীতিতে থাকার পরেও কেউ একটা আঙুল তুলতে পারেননি তাঁর দিকে। এটাই সবথেকে বড় পুরস্কার।” দেব বলছিলেন, “মাস দেড়েক আগেও জেঠুর সঙ্গে কথা হয়েছে। যেখানেই থাকুক না কেন ভাল থাকুন, শান্তিতে থাকুন।” বলতে বলতে চোখের কোণে জল চিকচিক করে ওঠে দেবের।

Dev TMC CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy