E-Paper

উদ্বোধনে ‘শান্ত’ দর্শকের খোঁজ শুরু

আগামী ৩০ এপ্রিল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লোক নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি ব্লকে পর্যাপ্ত বাস রাখা হচ্ছে।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:১০
দিঘার জগন্নাথ মন্দির।

দিঘার জগন্নাথ মন্দির। —ফাইল চিত্র।

দামাল নয়, প্রয়োজন ‘শান্ত’ লোকজনের। তাঁদেরই খোঁজ চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন! উপলক্ষ্য, দিঘার জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনে দর্শকের আসন ভরানো।

আগামী ২৯ এপ্রিল দিঘায় জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রে হোম যজ্ঞের অনুষ্ঠান হবে। ৩০ এপ্রিল মন্দিরের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মমতা ছাড়াও একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পপতি, শিল্পী হাজির থাকবেন। জমকালো অনুষ্ঠান দেখার জন্য ১২ হাজারের দর্শকের আসন তৈরি করা হচ্ছে। এই আসন ভরানো হবে পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ বাসিন্দা এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দিয়ে। তবে অনুষ্ঠানে যাতে বাড়তি হল্লা না হয় এবং তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অপেক্ষাকৃত ‘শান্ত’ এবং ‘শৃঙ্খলাপরায়ণ’ নেতা এবং লোকেদের খোঁজ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। সঙ্গত কারণে বিডিওদের দেখেশুনে লোকেদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে শুক্রবার দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদে (ডিএসডিও) বিডিওদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। অনুষ্ঠানে দর্শক নিয়ে যাওয়ার জন্য বৈঠকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের জেলা প্রশাসনের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিডিও জানাচ্ছেন, উদ্বোধন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী এবং অতিথিরা থাকাকালীন দর্শক আসনে যাতে কোনও চিৎকার বা অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে, সে দিকে নজর রেখে শান্ত লোকেদের নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। শুক্রবার ওই বৈঠকের পর ‘শান্ত’ এবং ‘অনুগত’ লোকের খোঁজ শুরু হয়ে গিয়েছে ব্লকে ব্লকে।

আগামী ৩০ এপ্রিল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লোক নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি ব্লকে পর্যাপ্ত বাস রাখা হচ্ছে। বাসে ওই সব লোকেদের তোলার আগে তাঁদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য নথিভূক্ত রাখতে বলা হয়েছে বিডিওদের। গুগল সিট’ তৈরি করে নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর, কোন বাসে যাত্রী যাচ্ছেন, তা লিখে রাখতে হবে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না বিডিওরা। রামনগর-১ এর বিডিও পূজা দেবনাথ বলেন, ‘‘বিডিওদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে ঠিক। তবে লোক নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জেলাশাসকের চূড়ান্ত নির্দেশ আসেনি।’’

প্রশাসনিক এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি অর্থ খরচ করে ধর্মের জন্য কিছু নির্মাণ করা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঢপবাজি মানুষ বুঝে গিয়েছে। তাই উদ্বোধন অনুষ্ঠান সফল করতে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার। তবে তৃণমূলে শান্ত এবং অনুগত লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।’’ তৃণমূলের জেলা (কাঁথি) সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ট্রাস্ট তৈরি করেছে। অনুষ্ঠানের সব কিছু ঠিক করছে ওই ট্রাস্ট। বিজেপি ভুল কথা বলছে।’’

আপাতত দিঘা হাসপাতালের সামনে মাঠে তৈরি হচ্ছে হ্যাঙ্গার। মূল হ্যাঙ্গারে ছ’হাজার, দ্বিতীয় হ্যাঙ্গারে চার হাজার এবং তার পরের হ্যাঙ্গারে দু’হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, দর্শক আসনে বসে থাকা লোকেদের উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধনা জানানো হবে। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নীচে থাকা ১২ হাজার দর্শকেও উত্তরীয় পরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর জন্য বিভিন্ন ব্লক থেকে প্রতি বাসে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁরা উত্তরীয় পরিয়ে দেবেন। জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী দিঘা জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

digha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy