ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চলছে রোগীদের খাবার বিলি। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের দিতে হবে গরুর দুধ। বাজার থেকে টাটকা রুই-কাতলা কিনে তা রান্না করার কথা। শিশুদের জন্য আলাদা ভাবে রান্না করার নির্দেশও রয়েছে। এছাড়াও সুগার, কিডনি ও লিভার জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি থাকা রোগীদের জন্যেও ভিন্ন ভিন্ন পথ্য থাকার কথা। রান্না করতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে। তা একই কড়াইয়ে হতে পারে। কিন্তু সেই কড়াই অবশ্যই ভাল করে পরিষ্কার করার পর।
কিন্তু এই নিয়ম কি আদৌ মানা হয় জেলা হাসপাতালে? অভিযোগ, সরকারি নির্দেশ থাকলেও তা সবই খাতায়-কলমে। বাস্তবে রান্না হয় একই কড়াইয়েতেই। সেই খাবারই পান সাধারণ রোগী থেকে শিশু-সহ সুগার, কিডনি, লিভারের সমস্যায় ভোগা রোগীরা। আর গরুর দুধের পরিবর্তে দেওয়া হয় পাউচ দুধ। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে এমনই দস্তুর।
ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পরও ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের ভোলবদল এতটুকুও হয়নি। শনিবার ঘাটাল হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে দেখা গেল একই কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে। পরে সেই তরকারি একাধিক পাত্রে তুলে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রসূতি ,শিশুদের। একই রকম ভাবে সুগার, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী থেকে লিভার ও কিডনির অসুখে ভোগা রোগীরাও খাচ্ছেন ওই তরকারিই।
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দ পথ্যের মান নিম্নমানের বলে অভিযোগ রোগীদের। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে কাঁথির শেখ মোক্তার বলেন, “হাসপাতালের খাবার মুখে তোলা যায় না। বাড়ি থেকে আমাকে খাবার দিয়ে যায়।’’ হাসপাতালের রোগীদের সকাল, দুপুর আর রাতের পথ্যের জন্য রোগী পিছু বরাদ্দ ৫১ টাকা। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের পথ্য সরবরাহকারী কানাই জানার কথায়, “সরকারি নিয়মমাফিক পথ্য দিতে মাথা পিছু খরচই তো পড়ে ৫৮। কিন্তু মেলে ৫১ টাকা।’’ তা হলে নিজের ক্ষতি করে খাবার সরবরাহ করছেন? হাসেন কানাইবাবু। বুঝতে অসুবিধা হয় না জলের মত দুধ, ডাল আর মাছের সাইজ ও ওজন নিয়ে কেন হাসপাতালের রোগীদের অভিযোগ।
রোগীদের আদর্শ পথ্যর আদর্শ তালিকা কাঁথি হাসপাতালে। তবে তা রোগীদের পাতে পৌঁছায় না বলেই অভিযোগ। ছবি: সোহম গুহ।
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী জানান, “গত সাড়ে তিনবছর ধরে কাঁথি হাসপাতালের সুপার হিসেবে রোগীদের যতটা সম্ভব ভাল পথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি বা করছি। কোনও কোনও রোগী মৌখিক আপত্তি জানালেও কেউ কোন লিখিত অভিযোগ কখনও করেন নি।” তবে সব্যসাচীবাবু স্বীকার করেছেন, রোগীদের পথ্যের মান পরীক্ষা করার জন্য কোনও নজরদারি নেই। নেই হাসপাতালের দুই সহকারী সুপারও।
ঘাটাল হাসপাতালে রোগীদের খাবার নিয়ে অবশ্য কোনও অভিযোগ নেই। দুপুর-রাতে ভাতের সঙ্গে মাছ-ডিম তরকারি দেওয়া হয়। দুধও পান রোগীরা। পাঁউরুটি-ডিম-কলাও দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি নিয়ম মেনে যে রান্না হয় না তা স্বীকার করে নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। নামী কোম্পানির তেল এবং মশলায় রান্না করার নিয়ম থাকলেও সেই নির্দেশ যে আদৌও মানা হয়নি তাও অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেই ফেললেন, “আমাদের বাজারে সব বলা আছে। সস্তার মাছ (রুই-কাতলা মোটেও নয়) রাখা থাকে। সব্জিও একই ভাবে কেনা হয়। কখনও-সখনও মাছ ফ্রিজেও রেখে দেওয়া হয়।” ঘাটাল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার গোপাল দত্ত বলেন, “আমার সরকারি নিয়ম মেনেই রোগীদের খাবার সরবরাহ করে থাকি। তবে সব সময় তো সমস্ত নিয়মকানুন মানা সম্ভব হয়নি। একটু-আধটু গলদ তো রয়েইছে।” সুপার কুনাল মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “এখানে খাবার নিয়ে কোনও অনিয়ম নেই। সরকারি ডায়েট চার্ট মেনেই সব সরবরাহ করা হয়। আমাদের কড়া নজর রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy