E-Paper

পনেরোতেই মা! বাড়ছে উদ্বেগ

১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ১০,৪৩১ জন। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫৭,৪০১ জন অন্তঃসত্ত্বা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:১৪
এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার ক্ষেত্রে নানা ঝুঁকি থাকে। তা-ও নাবালিকা গর্ভধারণ সে ভাবে কমছে না পশ্চিম মেদিনীপুরে। আঠারো দূর, পনেরোতেই মা হচ্ছে অনেকে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। এখন আবার সুপ্রিম-আদেশে চাকরি খুইয়েছেন একাংশ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী। নাবালিকা বিয়ে রোধে স্কুলেরও ভূমিকা থাকে। স্কুল নজরদারি চালায়। সঙ্কটের আবহে সেই নজরদারি কমতে পারে বলে আশঙ্কা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছিলেন ৬৪,৯৯৮ জন অন্তঃসত্ত্বা। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এর মধ্যে নাবালিকা ১১,৫৬১ জন। আর ১,১৩০ জনের বয়স পনেরোর কম। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ১০,৪৩১ জন। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫৭,৪০১ জন অন্তঃসত্ত্বা। এর মধ্যে নাবালিকা ৯,১৩৯ জন। অনূর্ধ্ব- ১৫ ২০৩ জন। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ৮,৯৩৬ জন।

জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি মানছেন, ‘‘আমাদের জেলায় বাল্যবিবাহ একটি সমস্যা। একে রোধ করতেই হবে। বাল্যবিবাহ রোধে বেশ কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীরও বক্তব্য, ‘‘অল্প বয়সে বিয়ে অবশ্যই রুখতে হবে। এর জন্য সমাজের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে।’’ ১০৯৮ এবং ১১২— এই দু’টি টোল ফ্রি নম্বরের প্রচার করছে প্রশাসন। ‘অন্তরা’ ইঞ্জেকশনের প্রচারও করছে স্বাস্থ্য দফতর। জন্ম নিয়ন্ত্রণে এই ইঞ্জেকশন ব্যবহার হয়। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘অল্প বয়সে বিয়ে যদি হয়েই যায়, তাহলে যাতে গর্ভাবস্থা না হয়, তার জন্য অন্তরা ইঞ্জেকশন রয়েছে। বিনা পয়সায় পাওয়া যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। একবার ইঞ্জেকশন নিলে তিন মাস আর নিতে হয় না। একবার ইঞ্জেকশনে ৭-১০ মাস গর্ভাবস্থা রুখে দেওয়া যায়।’’

প্রসূতির বয়স মাত্র পনেরো। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলেন পরিজনেরা। সঙ্গে খিঁচুনি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু হল। কিছুটা বিপন্মুক্ত করে, অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই কিশোরীকে তোলা হল অপারেশন টেবিলে। সিজ়ার হল। নাবালিকা জন্ম দিল কন্যাসন্তানের। কিন্তু নাবালিকা মায়ের বিপদ কাটল না। সদ্যোজাতের ওজনও মাত্র এক কেজি সাতশো গ্রাম। তারও ‘কী হয়-কী’ হয় অবস্থা। সম্প্রতি জেলার এক হাসপাতালের ঘটনা। এমনটা ঘটছে আকছার।

পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১টি ব্লকের মধ্যে ১২-১৩টি ব্লকেই অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার হার উদ্বেগজনক। ব্লকগুলি হল— কেশপুর, চন্দ্রকোনা- ১, চন্দ্রকোনা- ২, নারায়ণগড়, সবং, পিংলা, গড়বেতা- ১, গড়বেতা- ২, গড়বেতা- ৩, খড়্গপুর- ১, খড়্গপুর- ২, মেদিনীপুর (সদর), শালবনি প্রভৃতি। নাবালিকা বিয়ে রোধ সহ নানা ব্যাপারে স্কুলগুলি সচেতনতা প্রচার চালায়। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সঙ্কটের আবহে সেই প্রচার ব্যাহত হবে না তো? শালবনির মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, ‘‘স্কুলের পঠনপাঠন কী ভাবে চলবে, সে নিয়েই চিন্তায় আছি। ধারাবাহিকভাবে আমরা নানা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করি। দেখি কী হয়!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy