Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Jhargram

পুজোয় চমক সুভাষ-তথ্য

সরকারি স্তরে পর্যটকদের জন্য এমন তথ্য তালিকা দেওয়ার দাবিটি বহুদিনের। সরকারি স্তরে বারে বারেই বলা হয়েছিল, ঝাড়গ্রামে নেতাজির সফরের উপযুক্ত তথ্য তাদের হাতে নেই।

দুর্গা ময়দানে সুভাষচন্দ্রের ঝাড়গ্রাম সফরের সচিত্র তথ্য তালিকা। নিজস্ব চিত্র

দুর্গা ময়দানে সুভাষচন্দ্রের ঝাড়গ্রাম সফরের সচিত্র তথ্য তালিকা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৩২
Share: Save:

অবশেষে ঝাড়গ্রাম শহরের দুর্গা ময়দানে পর্যটক ও দর্শকদের জন্য দুর্গা ময়দান ক্লাব কমিটির উদ্যোগে সুভাষচন্দ্র বসুর সফরের তথ্য-তালিকা দেওয়া হল। এই প্রথম বেসরকারি ভাবে এমন উদ্যোগ বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট ক্লাব কমিটির।

সরকারি স্তরে পর্যটকদের জন্য এমন তথ্য তালিকা দেওয়ার দাবিটি বহুদিনের। সরকারি স্তরে বারে বারেই বলা হয়েছিল, ঝাড়গ্রামে নেতাজির সফরের উপযুক্ত তথ্য তাদের হাতে নেই। তবে দুর্গা ময়দান ক্লাবের কর্মকর্তা তন্ময় সিংহ ও মলয় দাস জানাচ্ছেন, ১৯৪০ সালের পুরনো আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুসরণ করেই তাঁরা ‘ঝাড়গ্রামে দেশবরেণ্য সুভাষচন্দ্রের পদার্পণের ইতিবৃত্ত’ শিরানামে তথ্য-তালিকাটি তৈরি করেছেন। প্রয়াত নেতাজি-গবেষক তারাপদ করের সৌজন্যে পাওয়া ১৯৪০ সালের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি ও খবরের কোলাজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ওই তথ্য তালিকা। নয়ের দশকের গোড়ায় গবেষণা ও প্রতিবেদন লেখার জন্য আনন্দবাজার পত্রিকার আর্কাইভ থেকে পুরনো সংস্করণ সংগ্রহ করেছিলেন তারাপদ। সেই তথ্য অনুসরণ করে আপাতত পুজোর মরসুমে তথ্য-তালিকার ফ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। তন্ময় ও মলয় জানালেন, শীঘ্রই তথ্য তালিকার স্থায়ী ফলক তৈরি করা হবে।

সালটা ১৯৪০। তখনও সুভাষচন্দ্র বসু ‘নেতাজি’ হননি। ওই বছরের ১২ মে ঝাড়গ্রামে এক জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। নাড়াজোলের কুমার দেবেন্দ্রলাল খানের আয়োজনে অবিভক্ত মেদিনীপুরে সেটিই ছিল সুভাষচন্দ্রের শেষ জনসভা। ওই সভায় সুভাষচন্দ্র ঘোষণা করেছিলেন, ‘আপস নয়, সংগ্রাম ও ত্যাগের পথেই স্বরাজ আসবে’। যে মাঠে সুভাষচন্দ্র সভা করেছিলেন সেটি এখন অরণ্যশহরের দুর্গা ময়দান। ময়দানের অবশিষ্ট কিছু নেই। সেখানে রয়েছে দুর্গামন্দির। দুর্গা ময়দান ক্লাবের উদ্যেগে বার্ষিক দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজো হয়। ১৯৪০ সালের ১২ মে সকালে মেদিনীপুর থেকে গাড়িতে ধেড়ুয়া হয়ে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র। ঝাড়গ্রাম আসার পথে দহিজুড়িতে বিশাল তোরণ বানিয়ে সুভাষচন্দ্রকে অর্ভ্যথনা জানানো হয়েছিল। ঝাড়গ্রামে এসে ব্যবসায়ী নলিনবিহারী মল্লিকের আতিথ্য গ্রহণ করে একটি টালির বাড়িতে (এটি এখন উড়ালপুলের কাছে বাছুরডোবা পেট্রোল পাম্পের অফিস ঘর) কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছিলেন। আরও কিছু কর্মসূচি সেরে ঝাড়গ্রাম কোর্টে বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীদের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকের পর বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছেছিলেন সুভাষচন্দ্র। তার আগে ঝাড়গ্রামের শান্তিনিকেতন হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন। সভা সেরে ওই রাতেই ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে হাওড়ার ট্রেন ধরেছিলেন সুভাষচন্দ্র।

শহরের ঐতিহ্যবাহী সেই দুর্গা ময়দানে ১৯৯৭ সালে সুভাষচন্দ্রের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বেসরকারি ভাবে দুর্গা ময়দান ক্লাব কমিটির উদ্যোগে মাঠের একপাশে একটি স্মারকস্তম্ভ তৈরি করা হয়। চলতি বছরে বসেছে সুভাষচন্দ্রের শ্বেতপাথরের আবক্ষ মূর্তি। সুভাষচন্দ্রের সফরের বিষয়ে ১৯৪০ সালের ১৪ মে প্রকাশিত খবরের তথ্য ও ছবি ব্যবহার করেই তথ্য তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পর্যটন দফতর স্বীকৃত ঝাড়গ্রাম টুরিজম-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলছেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। ঝাড়গ্রামের অনেক বাসিন্দাই এসব তথ্য জানতেন না। পুজোয় বেড়াতে আসা পর্যটকরাও ঝাড়গ্রামে সুভাষচন্দ্রের সফরের খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে পেরে রোমাঞ্চিত হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Netaji Subhas Chandra Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE