Advertisement
E-Paper

কন্ট্রোল রুম খুলে হুকিং! কারবার ফাঁস

মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে থাকা একটি কালো তারে টান দিতে দিতে এক পা, এক পা করে এগোচ্ছেন বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মী। আর ততই চোখ কপালে উঠছে অন্য কর্মীদের।

নিজস্ব  সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৩
হুকিংয়ের তার টেনে এনে এখান থেকেই দেওয়া হত সংযোগ। নিজস্ব চিত্র

হুকিংয়ের তার টেনে এনে এখান থেকেই দেওয়া হত সংযোগ। নিজস্ব চিত্র

মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে থাকা একটি কালো তারে টান দিতে দিতে এক পা, এক পা করে এগোচ্ছেন বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মী। আর ততই চোখ কপালে উঠছে অন্য কর্মীদের। মাটি থেকে তার টেনে তুলতে তুলতে যতই এগোন ওই কর্মী, তার যেন আর শেষ হয় না। তারের পথ ধরেই ত্রিপল এবং পলিথিনে ঘেরা একটি আধা অন্ধকার অস্থায়ী ঘরের সামনে পৌঁছন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা। ঘরের ভিতরে ঢুকে আরও এক দফা চমক! সেখানে রীতিমতো বিদ্যুৎ বণ্টনের ‘কন্ট্রোল রুম’ তৈরি করা হয়েছে।

বুধবার কাঁথিতে বড়সড় বিদ্যুৎ চুরির চক্রকে ফাঁস করল বিদ্যুৎ দফতর। দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, হুকিংয়ের চেনা ছকের চেয়ে অনেকটা আলাদা পদ্ধতিতে চুরি করা হচ্ছিল বিদ্যুৎ। তা দিয়ে রীতিমতো ব্যবসাও খুলে ফেলেছিল অভিযুক্তেরা। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিদ্যুৎ দফতরের কাঁথি কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের এক প্রতিনিধি দল বুধবার দিনভর অভিযান চালায়। কাঁথির দারুয়া এলাকায় লাগাহাটের কাছে বিদ্যুৎ চুরির বহর দেখে কার্যত চক্ষুচড়কগাছ হয়ে যায় প্রতিনিধিদের।

প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কাঁথি পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের লাগাহাটের কাছে বিদ্যুতের একটি ৪৪০ ভোল্টের ট্রান্সফর্মার রয়েছে। তাতে লাগানো হয়েছিল হুকিংয়ের তার। পরে সেই ট্রান্সফর্মারের নীচে মাটি খুঁড়ে তার টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে। সেখানে একটি অস্থায়ী ঘরের মধ্যে খোলা হয়েছিল হুকিংয়ের বিদ্যুৎ বণ্টনের ‘কন্ট্রোল রুম’। অভিযোগ, ওই ঘর থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে আশে পাশের দোকানে। ওই ঘটনায় তিন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে কাঁথি থানায় অভিযোগ জানিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর।

লাগাহাটের পাশেই রয়েছে দারুয়া ময়দান। সেখানে প্রতিদিনই স্থানীয়েরা ক্রিকেট, ফুটবল-সহ নানা খেলাধুলো করেন। অথচ ওই মাঠের নীচ দিয়েই দুষ্কৃতীরা ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুতের তার নিয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ দফতর জানাচ্ছে, ওই তারে শক খেয়ে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। যে ‘কন্ট্রোল রুম’ বানানো হয়েছিল, তার চারদিকে বিভিন্ন দোকানের স্টল বসিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। বাইরে থেকে যাতে কেউ ওই ঘর বা তার কাজকর্ম দেখতে না পান, সে জন্যই ওই পন্থা। চুরি করা বিদ্যুৎ দিয়ে যে সব দোকান চলছিল, সেগুলির সংযোগ ছিন্ন করে বিদ্যুৎ দফতর। বাজেয়াপ্ত করা হয় ‘কন্ট্রোল রুমে’র বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম।

বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, এই অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম থেকে পাশের একটি লটারি, চাউমিন-রোল দোকান এবং হোটেলে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছিল। তাদের হাতেনাতে ধরা হয়েছে। দফতর জানাচ্ছে, এই চুরির সঙ্গে কোনও দক্ষ টেকনিশিয়ান রয়েছে। তা না হলে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ওই তার থেকে চুরি করা সহজ কাজ নয়।

এলাকায় এত বড় বিদ্যুৎ চুরির চক্র সক্রিয়, অথচ সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কি কিছু জানত না? এ নিয়ে এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাবুল বলেন,‘‘বিষয়টি জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ ঘটনায় কাঁথি বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার মৌমিত মাঝি বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পিছনে বড়সড় বিদ্যুৎ চুরির চক্র রয়েছে। দারুয়ার বাসিন্দা শেখ আনোয়ারউদ্দিন-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আপাতত অভিযান চলবে।’’

গ্রাফিক: জিয়া হক

Contai Hooking Electricity Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy