হাতির হামলায় পরে। —নিজস্ব চিত্র।
তখন মঙ্গলবার ভোররাত। ঘড়িতে প্রায় পৌনে তিনটে। বাড়ির বাইরে ধুপধাপ শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় ঝাড়গ্রাম শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভরতপুরের রুপী মাহাতোর। সদর দরজা খুলে ওই বৃদ্ধার চোখ ছানাবড়া। আলো-আঁধারিতেও দেখতে পেলেন একটি দাঁতাল উঠোনের একপাশে রাখা ঘুঁটের বস্তা ফেলে কিছু খুঁজছে।
ঝাড়গ্রামের গ্রামাঞ্চলে কখনও দলমার পালের হাতি, কখনও বা রেসিডেন্ট হাতিরা দাপিয়ে বেড়ায়। কিন্তু খাস অরণ্যশহরের জনবহুল এলাকায় হাতির হানা শেষ কবে মনে করতে পারছেন না অনেকেই। বন দফতর বলছে, হাতিটি গ্রামীণ এলাকায় তাড়া খেয়ে কন্যাডোবার দিক থেকে পথ ভুলে শহরে ঢুকে পড়েছিল। তখনও দিনের আলো ফোটেনি। পথে ঘাটে লোকজন ছিলেন না। তাই বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে।
হাতিটি বেড়া ভেঙে রুপী মাহাতোর পড়শি গণেশ দাসের উঠোনে হাজির হয়। তারপর গণেশের বাড়ির বেড়া ভেঙে সে মেহেরাবাঁধ দিঘির পাড় ধরে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকে লোকালয়ে। শহরের জনবহুল এলাকায় এদিন ঘুমচোখে গজরাজকে দেখে হতভম্ভ অনেকেই। যাঁদের হাতি-দর্শন হয়নি, তাঁরা পরে হাতির পায়ের ছাপ আর ভাঙা পাঁচিল দেখে আশ মিটিয়েছেন। রুপীদেবীর সম্পর্কিত জামাই নিমাই মাহাতোর বাড়ির শৌচাগারের সোকপিঠটি হাতির পায়ের চাপে ভেঙে গিয়েছে। কয়েকজন গৃহস্থের বেড়া ভেঙে, পাঁচিল ও লোহার গেট ভেঙেছে হাতিটি। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপল্লির বাসিন্দা ঝাড়গ্রাম আইটিআইয়ের শিক্ষক অজয়শঙ্কর চন্দের বাড়ির পাঁচিলের লোহার সদর গেট উপড়ে দিয়েছে হাতি। অজয়বাবু বলেন, ‘‘প্রায় পাঁচ দশক এখানে আছি। জনবহুল এলাকায় এ ভাবে বুনো হাতি ঢুকতে দেখিনি।’’ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডীপুরের প্রবীণ বিপ্লব সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘লোহার সদর দরজার দু’দিকের পিলাম সমেত উপড়ে ভেতরে ঢোকে হাতিটি। অনেক কলাগাছ থাকলেও সে সব ছুঁয়েও দেখেনি।’’
বন দফতর সূত্রে খবর, এর আগেও শহরের প্রান্তিক এলাকাগুলিতে রেসিডেন্ট হাতি ঢুকেছে। তবে সেটা সাধারণত সন্ধ্যায় কিংবা বিকেলের দিকে। কিন্তু এ বার ভোররাতের দিকে যে ভাবে চুপিসাড়ে হাতিটি শহরের মধ্যে ঢুকেছে, তাতে উদ্বিগ্ন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দারা। শহরের পথে অনেকেই প্রাতর্ভ্রমণে বেরোন। শহরের পথে হাতি চিন্তায় ফেলেছে তাঁদেরও। হাতিটি ভরতপুর, বেনাগেড়িয়া, নতুনপল্লি, চণ্ডীপুর, সুভাষপল্লি হয়ে পরে এলাকাবাসী ও বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে আকাশবাণীর মাঠ পেরিয়ে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ জঙ্গলের দিকে চলে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy