আশা-জাগিয়ে: সেরে উঠছে অসুস্থ হস্তিনী। দুধপাথরিতে। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে শুঁড় দোলাচ্ছে। এমনকী নড়েচড়ে বসার চেষ্টাও করছে পানমণি। আর তাতেই খুশির হাওয়া দুধপাথরিতে। স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ মাহাতোর গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর। বলছেন, “ও ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি।” আশাবাদী বন দফতরের রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্তও। তিনি মানছেন, “আগের থেকে ওর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।’’
সপ্তাহ দুয়েক আগে এই হস্তিনীটিকে জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের দুধপাথরি গ্রামের বাসিন্দারা। বন দফতরের কর্তা-কর্মীরা আসেন। হাতিটির চিকিৎসা শুরু হয়। বনকর্মীদের পাশাপাশি হাতিটির দেখভাল করছেন গ্রামবাসীও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পালা করে পাহারা দিচ্ছেন তাঁরা। ডিএফও অর্ণববাবু বলেন, “স্থানীয় মানুষজন যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। হাতিটির দেখভালও করছেন।”
জঙ্গলের মধ্যে টানা এক-দেড় সপ্তাহ অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকার পরে কোনও হাতি সুস্থ হয়েছে, এমন নজির কমই রয়েছে। বন দফতরের এক কর্তাও বলছিলেন, “অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলে হাতির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমই থাকে। এ ক্ষেত্রে হাতিটি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে, এটাই ভাল ব্যাপার।’’ বন দফতরের এক সূত্রে খবর, ওষুধপত্র এবং খাবারের মেনুতে বদল আনার পরেই পানমণি ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। এই দুই ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনা হয়েছে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে। আগে হাতিটিকে ওআরএস বা গ্লুকোজ মেশানো জল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তখন সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারপর থেকে সাধারণ জলই দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে রোজ নিয়ম করে স্যালাইন এবং ভিটামিট ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে। এক বনকর্মী বলছিলেন, “গত তিনদিনে সাত বোতল স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।’’
শরীর একটু সুস্থ হওয়ায় খিদেও বেড়েছে পানমণির। খিদে পেলে শুঁড় নাড়াচ্ছে। কলা-আখ-লাউ মাঝেমধ্যে মুখে তুলেছে। এখন কলাপাতায় মুড়ে চাল এবং মসুর ডালও দেওয়া হচ্ছে। বন দফতর সূত্রে খবর, প্রচণ্ড গরমে শরীরে জলের পরিমাণ কমে গিয়েই হস্তিনীটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গোড়ায় সে চিকিৎসায় বিশেষ সাড়া দিচ্ছিল না। পরে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য বনপাল নীরল সিঙ্ঘলের পরামর্শে জেলার বনকর্তারা আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা শুরু হয়।
এক সময়ে চিড়িয়াখানায় নিয়ে গিয়ে পানমণির চিকিৎসার কথা ভাবা হচ্ছিল। এখন বন দফতরের এক কর্তা বলছেন, “হাতিটি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে। তাই আপাতত ওই জঙ্গলেই ওর চিকিৎসা চলবে।’’ শিগগিরি গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে পানমণি। ফিরে যাবে সবুজ জঙ্গলে। আশায় দুধপাথরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy